নবজাতকের জন্মের পরপরই বুকের দুধ পান করাতে শুরু করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পরপর যত দ্রুত সম্ভব, এমনকি মায়ের গর্ভফুল প্রসব হওয়ার আগেই বাচ্চাকে মায়ের বুকে দিতে হবে। শিশুর জন্মের পরপরই প্রথম এক থেকে দুই দিন বুকের দুধ ভালোমতো আসে না। তখন ঘন হালকা হলুদ রঙের যে শালদুধ বের হয়, সেটি পুষ্টিগুণে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় উচ্চমানের। দুধ খাওয়াতে শুরু করলে মায়ের বুকে দুধের প্রবাহ বাড়বে এবং শিশুটিও দ্রুত দুধ খাওয়া শিখে যাবে।
উষ্ণতা: শিশুকে একটি মোটা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে না রেখে কয়েক স্তরে নরম সুতি কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো ভালো। অতিরিক্ত রংচঙে, জরিযুক্ত বা সিনথেটিক কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো উচিত নয়। বাজার থেকে কাপড় কিনে সরাসরি শিশুকে না পরিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে তারপর পরানো উচিত।
নাভির যত্ন: চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত ধাত্রী বা সেবিকা প্রসবের পরপরই বাচ্চার নাভিটি জীবাণুমুক্ত ব্লেড দিয়ে কাটবেন এবং দুটি জীবাণুমুক্ত ক্ল্যাম্প বা সুতা দিয়ে নাভি বেঁধে দেবেন। এরপর নাভিতে একবার ঘন স্পিরিট লাগিয়ে দিতে হবে। বাসায় আনার পরে নাভিতে কোনো ধরনের সেঁক দেয়া যাবে না। এ ছাড়া কোনো মলম বা স্পিরিট দেয়ার দরকার নেই। নাভি শুকনো ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নাভি ঝরে যাওয়ার পরও নাভিমূলে কোনো রকম সেঁক বা মলম দেয়ার দরকার নেই।
শিশুর ত্বকের যত্ন: শিশুর ত্বকে আমরা সরষের তেলসহ নানা ধরনের তেল বা লোশন মাখি। সরষের তেল ত্বকের জন্য উপকারী নয়, তা যত খাঁটিই হোক না কেন। অলিভ অয়েল শিশুর ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো। শিশুকে বেবি সোপ দিয়ে গোসল করানোর আগে বা পরে অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করা ভালো। মাঝেমধ্যে সকালের নরম রোদে শিশুকে রাখা যায়। লক্ষ রাখতে হবে, খোলামেলা রাখার কারণে যেন ঠাণ্ডা লেগে না যায়। নবজাতকের চোখে বা ভ্রুতে কাজল দেয়া ঠিক নয়। এতে চোখে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে।
অতিথি: নবজাতককে দেখতে অনেক আত্মীয়স্বজন যেন ঘরে ভিড় না করেন। অনেকের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বা ত্বকের সংক্রমণ থেকে নবজাতক আক্রান্ত হতে পারে।
বিপদচিহ্ন: যেসব লক্ষণ দেখলে নবজাতককে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে, সেগুলোই বিপদচিহ্ন। যেমন জ্বর আসা (১০০ ডিগ্রি বা তার বেশি) অথবা শিশুর শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া (৯৭ ডিগ্রির কম)। শিশু বুকের দুধ টানতে না পারলে, খেতে আগ্রহী না হলে, শিশু ঘনঘন শ্বাস নিলে (প্রতি মিনিটে ৬০ বারের বেশি), বুকের খাঁচা দেবে গেলে, শিশু নিস্তেজ হয়ে গেলে, বেশি নড়াচড়া না করলে বা খিঁচুনি হলে বুঝতে হবে এগুলো বিপদচিহ্ন। এ ছাড়া শিশুর জন্ডিস দেখা দেওয়া, যেমন হাত-পায়ের তালু হলুদ হওয়াও বিপদের লক্ষণ।
অধ্যাপক ডা. শাহীন আক্তার
নবজাতক, শিশু, কিশোর বিশেষজ্ঞ
আলোক হাসপাতাল লি., মিরপুর ১০, ঢাকা