রতনপুর স্টিলের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রতনপুর স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (আরএসআরএম) এর বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থপাচার এবং ঋণ খেলাপির গুরুতর অভিযোগ। এ প্রেক্ষিতে কোম্পানিটির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়,তদন্তের জন্য বিএসইসি তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে ১০টি নির্দেশনা দিয়ে তদন্ত কমিটির আদেশ জারি করা হয় এবং তদন্তের বিষয়টি আরএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন: বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. শাহনোজ, সহকারী পরিচালক মাহমুদুর রহমান এবং সহকারী পরিচালক ফারহানা ওয়ালেজা।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ সংকট, তারল্য ঘাটতি এবং কাঁচামালের অভাবসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে পুনরায় উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

তদন্ত কমিটি কোম্পানিটির কারখানা, অফিস, আর্থিক হিসাব এবং ব্যবসায়িক অন্যান্য কার্যক্রম তদন্ত করবে। বিশেষ করে, ২০২২ সালের ৪ জুলাই কমিশনে দাখিল করা পূর্ববর্তী তদন্ত প্রতিবেদনের আইন লঙ্ঘনের বিষয়গুলো পর্যালোচনা; ২০২১ সালের ৩০ জুনের পর থেকে আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার কারণ; কোম্পানির সামগ্রিক বর্তমান অবস্থা এবং ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কিনা, সে বিষয়ে প্রতিবেদন; প্রসপেক্টাস ও অনুমোদন অনুসারে আইপিও-এর ৩০ কোটি টাকা ব্যবহারের অনিয়ম; ঋণ ও মূলধন ব্যবহারে অনিয়ম; কোম্পানির অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত মামলাগুলো যাচাই এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিষয়ে রিপোর্ট; কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদ এবং অন্যান্যদের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনে জড়িত থাকার বিষয়াদী যাচাই-বাছাই করা হবে।

এছাড়াও ২০২১ সালের ৩০ জুন পরবর্তী কোনো আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি হয়ে থাকলে তার রাজস্ব আয়, বিক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য, কর-পরবর্তী নিট মুনাফা, শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস), নিট সম্পদ মূল্য, ইনভেন্টরি, অগ্রিম, আমানত, নগদ অর্থ, শেয়ার মূলধন, দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি দায়সহ অন্যান্য আর্থিক বিষয়গুলোর সত্যতা যাচাই করা হবে।

বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আইন লঙ্ঘনকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

উল্লেখ্য, আরএসআরএম ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং ২০২০ সালের শেষ দিকে এর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে কোম্পানিটি আর উৎপাদনে ফিরতে পারেনি, এমনকি গত পাঁচ বছরেও কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ বা ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি।

স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটেও ২০২১ সালের পর আরএসআরএম-এর কোনো হালনাগাদ আর্থিক তথ্য নেই। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি প্রতিষ্ঠানটি। যদিও ২০২০ সালে তারা ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।