রপ্তানি পণ্যের আড়ালে কোটি কোটি টাকা পাচারের খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তদন্তে উঠে আসে পাচারকারী প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি করা পণ্য থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আর দেশে ফেরেনি। পাচারকারী প্রতিষ্ঠান যে রপ্তানির অনুমতিপত্র (ইএক্সপি) দিয়ে থাকে, সেগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে। অথচ একটি অনুমতিপত্র একাধিক রপ্তানির চালানে ব্যবহারের সুযোগ নেই। ফলে এসব ইএক্সপির কার্যকারিতা নেই। এতে বৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই।
গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল রপ্তানিতে জালিয়াতি আর পাচার ‘ম্যাজিক’। প্রতিবেদনের তথ্য, পণ্য রপ্তানিও হয়নি, কিন্তু কাগজপত্র রপ্তানি হয়েছে; দেশে বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে। জালিয়াতি করে তৈরি করা সেই কাগজপত্র দিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকার প্রণোদনা। রপ্তানি পণ্যের প্রকৃত মূল্য অপেক্ষা বেশি মূল্য দেখিয়ে রপ্তানি করা হয়েছে, যাতে প্রণোদনা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। আবার রপ্তানি পণ্যের প্রকৃত মূল্য অপেক্ষা কম মূল্য ঘোষণা দিয়ে রপ্তানি করা হচ্ছে। এতে রপ্তানির অর্থ পাচার হচ্ছে, অন্যদিকে শুল্ককর ফাঁকি হচ্ছে। আবার পণ্যের ওজন কম বা বেশি দেখিয়ে রপ্তানি হচ্ছে। এতেও অর্থ পাচার হচ্ছে। আবার পণ্যের স্যাম্পল বা নমুনা ঘোষণায় কনটেইনার ভর্তি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। নমুনার আড়ালে কনটেইনার ভর্তি পণ্য রপ্তানির টাকাও পাচার হচ্ছে। রপ্তানিতে প্রতিনিয়ত ম্যাজিক কৌশলে কোটি কোটি টাকা অর্থ পাচার যেমন হচ্ছে, তেমনি সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে রপ্তানিতে জালিয়াতির নানান কৌশল উঠে এসেছে। এগুলো সামনে রেখে জালিয়াতি ও অর্থ পাচার রোধে ছয়টি পদক্ষেপ নিতে প্রতিবেদনে এনবিআরকে সুপারিশ করা হয়েছে।
আমরা মনে করি, জালিয়াতি বন্ধে অটোমেশন প্রকল্প ভূমিকা রাখবে। যারা রপ্তানিতে জালিয়াতি করছেন, নানাভাবে দেশকে রাজস্ববঞ্চিত করছেন; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে এ সুবিধাকে আধুনিকায়ন বা অটোমেশন করতে হবে। বিশ্বের অন্য দেশগুলো কীভাবে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করে, বন্ড সুবিধা দেয়, সেগুলোর মতো আমাদের কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ বিষয়ে গবেষণার ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য জব্দ করতে হবে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিধিমালা অনুসারে বিভাগীয় মামলা করার পাশাপাশি তাদের বন্ডিং কার্যক্রম ও আমদানি-রপ্তানির তথ্য খতিয়ে দেখাও জরুরি। জালিয়াতিতে জড়িতদের শাস্তি না হওয়ায় রপ্তানিতে অনিয়ম অর্থ পাচার চলতেই থাকবে। প্রতি বছর বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও রপ্তানি জালিয়াতিতে কী পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি হয়, তা দিয়ে কয়টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যাবে এ গবেষণা না করে কীভাবে তা শূন্য সহনশীলতায় বন্ধ করা যায় সেটি ভাবতে হবে।