Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 3:19 pm

রপ্তানি আয় বাড়লেও লক্ষ্য পূরণে হোঁচট

নিজস্ব প্রতিবেদক: সদ্যবিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর মাধ্যমে প্রবাসী আয়ের পর রপ্তানি আয়েও একটি ইতিবাচক বছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য। এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ এ রপ্তানি হয়েছিল পাঁচ হাজার ২০৮ কোটি ডলারের পণ্য। রপ্তানি আয় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে হোঁচট খেতে হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এ সময়ে দেশের রপ্তানিকারকরা পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে দেশে এনেছেন পাঁচ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ বা ২৪৪ কোটি ডলার কম।

গতকাল সোমবার প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জুনে রপ্তানি হয়েছে ৫০৩ কোটি ডলারের পণ্য, যা গত বছরের জুনের চেয়ে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। গত বছরের জুনে রপ্তানি হয়েছিল ৪৯০ কোটি ডলারের পণ্য। যদিও এ বছরের জুনের এ রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। এ জুনে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৫৬ কোটি ডলার।

গত ২৯ জুন দেশে কোরবানির ঈদ উদ্যাপিত হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ২৫-২৬ জুন থেকে পোশাক কারখানাগুলোয় ছুটি শুরু হয়। সে হিসাবে প্রায় এক সপ্তাহ কারখানাগুলোয় পুরোদমে উৎপাদন হয়নি। তারপরও জুন মাসে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় রপ্তানিকারকদের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও এক মাসে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয়ে আমরা খুশি। ঈদের ছুটিতে কয়েক দিন কারখানা বন্ধ থাকার পরও এই আয় সত্যিই অবাক করার মতো।’

আগামীতে এ আয় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ফারুক হাসান বলেন, ‘আগামী দিনগুলোয় এই ইতিবাচক ধারা থাকবে বলে মনে হয় না, কেননা বিশ্ব পরিস্থিতি অনুকূলে নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমছে। ইউরোপের দেশগুলোয়ও প্রবৃদ্ধি কমে আসছে।’ গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ আগের তুলনায় বেড়েছে কি নাÑএমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আগের থেকে বিদ্যুতের সরবরাহ বেড়েছে, লোডশেডিং কমেছে। আমরা আশা করছি এটা আরও কমে আসবে। এজন্য সরকারের সহযোগিতা আশা করছি।’

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫২ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন রপ্তানিকারকরা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৫৮ বিলিয়ন ডলার। 

৮৪.৫৮ শতাংশ আয় পোশাক খাত থেকে ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে মোট চার হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার আয় হয়েছে। এই অঙ্ক ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। আর চার হাজার ৬৮০ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হয়েছে দশমিক ৪১ শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই এসেছে পোশাক রপ্তানি থেকে। আর এই খাতের ওপর ভর করেই রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে চার হাজার ২৬১ কোটি ডলার আয় হয়েছিল।

বিদায়ী অর্থবছরে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে দুই হাজার ৫৭৪ কোটি ডলার আয় হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এই খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হয়েছে দশমিক ৫৪ শতাংশ।

অন্যদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে দেশে এসেছে দুই হাজার ১২৫ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এসেছে দশমিক ২৫ শতাংশ।

বর্তমান বিশ্বপেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক হচ্ছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। আর এই রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স।

গত রোববার রেমিট্যান্সের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, জুন মাসে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত তিন বছরে সবচেয়ে বেশি। তিন বছর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। 

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ওই অর্থবছরের মে মাসে, ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে এর চেয়েও বেশি অর্থ ২২০ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন বছর পর এক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে জুন মাসে।

সব মিলিয়ে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই হাজার ১৬১ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি।