সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আমদানিকৃত অপরিশোধিত জ্বালানি ক্রুড অয়েল থেকে পরিশোধনের মাধ্যমে উপজাত হিসেবে ‘ন্যাফতা’ উৎপাদন করে ইর্স্টান রিফাইনারি, যা এক সময় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন নিয়মিত বিদেশে রপ্তানি করত। কিন্তু স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহ কম থাকায় ২০২০ সালের পর থেকে ‘ন্যাফতা’ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে বছরের প্রায় ১০০ কোটি টাকা রপ্তানি আয় হাতছাড়া হয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল ইস্টার্ন রিফাইনারি প্রক্রিয়াজাত করে ডিজেল, অকটেন, এলপিজি ও ‘ন্যাফতা’ উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। যার মধ্যে ‘ন্যাফতা’ সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ২০১০-১১ অর্থবছরের ন্যাফতা রপ্তানির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। আর ২০১১-১২ অর্থবছরের ছিল এক লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন, ২০১২-১৩ তে এক লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ তে ৯৩ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ তে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ তে সাড়ে ৩৭ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ তে ১ লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ তে ১৮ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি কমে হয়েছিল মাত্র ১৮ হাজার ৭৯৫ মেট্রিক টন। আর ২০২১-২২, ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ন্যাফতা রপ্তানি বন্ধ ছিল। তবে বেসরকারি কয়েকটি রিফাইনারকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ১ হাজার মেট্রিক টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৮ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন ন্যাফতা সরবরাহ করা হয়। কর্মকর্তারা আরও জানান, বিএসটিআইয়ের মানদণ্ড অনুযায়ী পেট্রোল উৎপাদনের কারণে বিপিসির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) ন্যাফতার উৎপাদন কমে গেছে, যা হচ্ছে তা দিয়ে লোকান রিফাইনারিকে দেয়া হচ্ছে। ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের ন্যাফতা রপ্তানির জন্য দরপত্র আহ্বান করে বিপিসি। উš§ুক্ত দরপত্রে গত ১৩ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তাব পায় বিপিসি। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ন্যাফতার মূল্য ৫৭ দশমিক ৫৮ ডলার (১৩ জানুয়ারি তারিখের দর অনুযায়ী) ধরা হয়েছে। তার মধ্যে ইপডেসা পিটিই লিমিটেড প্রতি ব্যারেলে ২ দশমিক ৪৫ ডলার ডিসকাউন্টে (কমে) এবং ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড ব্যারেল প্রতি শূন্য দশমিক ০৮ ডলার প্রিমিয়ামে (বেশি দামে) প্রস্তাব দেয়। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ভিটল এশিয়া পিটিইকে কার্যাদেশ দিয়েছিল। সেই হিসাবে রপ্তানিযোগ্য ১৮ হাজার টন ন্যাফতার রপ্তানি মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ছিল।
সিভিও পেট্রোক্যামিকেল রিফাইনারি লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা মঈন শেয়ার বিজকে বলেন, আমদানিকৃত অপরিশোধিত জ্বালানি ক্রুড অয়েল থেকে পরিশোধনের মাধ্যমে উপজাত হিসেবে ন্যাফতা উৎপাদন করে ইস্টার্ন রিফাইনারি। বছরের ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টনের মতো পাওয়া যাচ্ছে। এ ন্যাফতা আগে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিদেশে রপ্তানি করত। এখন সিভিওসহ তিনটি বেসরকারি রিফাইনারির মাধ্যমে পেট্রোল, অকটেন ও সলবেন্ট উৎপাদন করা হচ্ছে। এছাড়া সরকার বিদেশ থেকে বেমরকারি রিফাইনারিগুলোকে কনডেনসেট আমদানিরও সুযোগ দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মনিলাল দাশ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল থেকে উপজাত হিসাবে খুব কম পরিমাণে ন্যাফতা পাওয়া যায়। আর এ ন্যাফতা পরিশোধন করে অকটেন, পেট্রোল ও ন্যাফতা উৎপাদিত হয়। আমরা আগে ন্যাফতা রপ্তানি করেছি। এখন দেশে বেসরকারিভাবে পরিশোধনের সুযোগ থাকায় তাদের দিয়ে পরিশোধন করে পেট্রোল, অকটন ও সলবেন্ট উৎপাদন করা হচ্ছে। তাই এখন রপ্তানি হচ্ছে না। গত চার থেকে পাঁচ বছরের বিদেশে ন্যাফতা বিক্রি করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দেশের কৃষি উৎপাদন, শিল্প প্রক্রিয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, গৃহস্থালি ও অন্যান্য কাজে জ্বালানি চাহিদার যোগান এককভাবে নিশ্চিত করে। গত অর্থবছরের বিপিসির মোট জ্বালানি তেল বিক্রয়ের পরিামণ ছিল ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড বিক্রয়।