রফতানি খাতে ৫% নগদ সহায়তা চায় বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক: তৈরি পোশাক খাত এখন সংকটে আছে। তাই আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব ধরনের পোশাক রফতানির ওপর রফতানি মূল্যের ওপর পাঁচ শতাংশ হারে ভর্তুকি তথা নগদ সহায়তা চায় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
সংগঠনটির সভাপতি রুবানা হক বলেন, আমরা হিসাব করেছি পাঁচ শতাংশ হারে নগদ সহায়তায় ১১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। আশা করি ২০১৯-২০ অর্থবছরের পাঁচ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেটে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য এ বরাদ্দ থাকবে।
গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে তিনটি সংগঠন আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানানো হয়। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এবং বিকেএমইএ ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনসুর আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, তৈরি পোশাক খাত এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। গত এক মাসে ২২টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। যেখানে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ক্লান্তিলগ্নে এসে পৌঁছেছি। এখন সহায়তা না দিলে সমস্যায় পড়ব। তাই আগামী পাঁচ বছর রফতানিতে পাঁচ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দরকার। এটি পেলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আর এটি দিলে ১৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি যাবে সরকারের। তবে আমরা এখন যে সহায়তা পাই এটি বাদ দিলে ভর্তুকি দাঁড়াবে ১১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা।
ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ মেয়াদ দ্বিগুণ করার দাবি জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, যেসব কারখানা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি নয় তাদের উৎপাদন কাজে ফিরে যাওয়া এবং ব্যবসা সচল রাখার জন্য সুযোগ হিসেবে পুনঃতফসিলিকরণের মেয়াদ দ্বিগুণ করা উচিত। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। সর্বোপরি অর্থনীতি সুফল ভোগ করবে। এ জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের প্রত্যাশা করছি।
রুবানা হক বলেন, আমদানি-রফতানি পর্যায়ে রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য না হলেও অনেক ক্ষেত্রে উৎসে ভ্যাট কর্তনের সব হিসাব ও দায়িত্ব সেবা গ্রহণকারীকে অর্থাৎ রফতানিকারককে দিতে হচ্ছে। এ বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করতে হচ্ছে অথচ সেবা প্রদানকারীদেরই দায়িত্ব এ হিসাব রাখা।
রুবানা হক আরও বলেন, রফতানি খাতগুলোর জন্য ডলারপ্রতি অতিরিক্ত পাঁচ টাকা বিনিময় হার প্রদান করা হলে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা প্রায় ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া যেসব কারখানার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারছে না তাদের নিরাপদ এক্সিটের জন্য ৩০০ কোটি টাকার ইমারজেন্সি ফান্ড গঠনের কথা বলেন রুবানা হয়।
এ সময় নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সহসভাপতি মনসুর আহমেদ আমেরিকার বাজারে ১৬ শতাংশ নগদ প্রণোদনার দাবি করেন। তিনি বলেন, নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্ট উৎপাদন ও রফতানিতে নিয়োজিত করদাতাদের জন্য উক্ত পণ্য রফতানি থেকে আয়ের ওপর করহার ১০ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, অর্থ আইন ২০১২ তে স্ট্যাম্প আইন ১৮৯৯ এর ধারা ১৩ সংযুক্ত করায় বিনিময় বিলের ওপর শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ স্ট্যাম্প শুল্কারোপ করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। শতভাগ রফতানিমুখী শিল্পের জন্য এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বাজেট উপলক্ষে বিজিএমইএ আরও কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। এগুলো হলোÑরফতানি সহায়ক মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ, পোশাকশিল্পকে সম্পূর্ণ ভ্যাটমুক্ত রাখা, পোশাকশিল্পের জন্য রফতানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা, উৎস করকে পূর্বের ন্যায় চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে গণ্য করা এবং করপোরেট কর ১২ শতাংশের পরিবর্তে পূর্বের ন্যায় ১০ শতাংশ করা। এছাড়া শ্রমিকের জন্য বিশেষ বরাদ্দ, বন্ডের অডিট কার্যক্রমের জন্য দলিলাদি দাখিলের সময়সীমা তিন মাসের পরিবর্তে ছয় মাস করা ও পোশাকশিল্পের জন্য প্রযুক্তি উন্নয়নে তহবিল বরাদ্দের মতো দাবি রয়েছে সংগঠনটির।
বিকেএমইএ’র প্রস্তাবনায় পোশাক শিল্পের জন্য উৎস আয়কর প্রদানকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে নির্ধারণ ও রফতানির বিপরীতে প্রত্যাবাসিত মূল্যের ওপর পাঁচ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। বিকেএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি এম মনসুর আহমেদ বলেন, ‘আমরা অনেক ক্ষেত্রে চার শতাংশ প্রণোদনার পরিবর্তে বাস্তবে পাই তিন দশমিক ২০ শতাংশ। পাঁচ শতাংশ হারে সব দেশের ক্ষেত্রে প্রত্যাবাসিত মূল্যের ক্ষেত্রে প্রণোদনা চেয়েছি। আমেরিকার বাজারের ক্ষেত্রে আমরা ১৬ শতাংশ নগদ প্রণোদনা চাই। কারণ দেশটিতে জিএসপি নেই। আমাদের অনেক বেশি কর দিতে হয়।’