সাইফুল ইসলাম: বছরের অন্য মাসগুলোর চেয়ে রমজান মাসের মহিমা অনেক বেশি। কারণ এ-মাসে নাজিল হয়েছে পবিত্র কোরআন। আত্মশুদ্ধির মাস হিসেবে সমধিক পরিচিত এই মাস। আল্লাহর রহমত ও বরকতে ধন্য এই মাস আমাদের জন্য আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের দারুণ একটা উপলক্ষ।
রমজান মাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো রোজা রাখা। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর রমজানের রোজা রাখা ফরজ।
আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরিদের ওপর। যাতে তোমরা আল্লাহ-সচেতন থাকতে পার। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)
অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময়ে সমসংখ্যক দিন রোজা রাখার বিধান। আর বিশেষ কোনো শারীরিক অবস্থার কারণে রোজা রাখা খুব কষ্টকর হলে সামর্থ্যবানের জন্য বিধান হলো একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদান করা।
তবে রমজানে রোজা রাখাটা-ই সবচেয়ে কল্যাণকর- বলা হয়েছে সুরা বাকারার ১৮৪নং আয়াতে।
কোরআনের জ্ঞান অর্জন এমনিতেই সকলের জন্য ফরজ।
পবিত্র রমজানে আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী পড়লে অনুভূতির স্তরে আসবে নতুন উপলব্ধি। কোরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী হওয়া যাবে। হাদিস হলো কোরআনের শিক্ষার ফলিত রূপ। তাই কোরআন বুঝতে হলে হাদিসের জ্ঞান জরুরি।
দানের জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হলো মাহে রমজান। কারণ রমজান মাসে দানের সওয়াব অন্য যে কোনো মাসের চেয়ে ৭০ গুণ!
অন্যদিকে, রুপার বর্তমান (২০২৩) বাজারদর হিসেবে ৫৫ হাজার টাকা এক চান্দ্রবছর জমা থাকলে আপনাকে জাকাত দিতে হবে। মাহে রমজান জাকাত প্রদানেরও সেরা সময়।
সংঘবদ্ধ দান ও জাকাত দিন কোয়ান্টামে। কারণ এখানে সুপরিকল্পিত ও ফলপ্রসূভাবে দান ও জাকাতের অর্থ ব্যয় করা হয় বহুমুখী সেবা প্রকল্পে। ফলে প্রদত্ত অর্থের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার যেমন হবে, তেমনি সংঘবদ্ধভাবে করায় সওয়াব হবে এককভাবে আদায়ের ৭০ গুণ!
রমজান মাসের বিশেষ অনুষঙ্গ তারাবিহ সালাত। নবীজির (সা.) সুন্নত হিসেবে সচেষ্ট হন তারাবিহ নামাজ আদায়ে।
নবীজির (সা.) সুন্নত হিসেবে সচেষ্ট হন তারাবিহ নামাজ আদায়ে
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবিহ সালাত আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়।’ (সুনানে নাসাঈ)
তাহাজ্জুদের সালাত রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। এ সালাতের রাকাত সংখ্যা সর্বনি¤œ দুই, সর্বোচ্চ বারো।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ফরজ সালাতের পর সব নফল সালাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ সালাত তথা রাতের সালাত। (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)
তাহাজ্জুদ আদায়ের জন্য ঘুম থেকে ওঠা অনেকের জন্য কষ্টকর। তবে রমজান মাসে সেহরি গ্রহণের জন্য যেহেতু উঠতেই হয়, আরেকটু আগে উঠে অনায়াসে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা সম্ভব।
এতেকাফ প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য জরুরি। নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে এত্তেকাফ করেছেন এবং এত্তেকাফ করতে বলেছেন।
এতেকাফ করলে মুসলিমের জীবনাচরণ পরিবর্তন হয়ে যায়, জীবন আল্লাহর রহমত বরকতে পূর্ণ হয়।
পবিত্র রজনী কদর খোঁজার জন্য যে ইবাদত আমরা করি আল্লাহ তা এত পছন্দ করেন যে স্বয়ং নবীজির (সা.) কাছেও তিনি শবেকদরের নির্দিষ্ট দিন প্রকাশ করেননি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা লাইলাতুল কদর খুঁজবে। শবেকদরের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তমকদরের রাতের ইবাদত-বন্দেগি হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগির চেয়েও উত্তম। কদরের রাত যেহেতু রমজানের শেষ দশকে লুকায়ি?ত আছে; তাই হিসাব করে বেজোড় রাতগুলোতে আপনি নৈশায়ন তথা ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাতযাপনের জন্য বাছাই করে নিতে পারেন। শুধু পানাহার বর্জন করাই রোজা নয়। নবীজি (সা.) বলছেন, প্রকৃত রোজা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কথা, ঝগড়া-ফাসাদ, তর্ক-বিতর্ক, অশ্লীল-খারাপ আচরণ ইত্যাদি যাবতীয়? গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকা। রমজান মাসে অপ্রয়োজনীয় কথা, গীবত, পরনিন্দা, পরচর্চা থেকে মুক্ত থাকলে; তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে চললে, আমাদের আত্মিক শক্তি জাগ্রত হবে।