Print Date & Time : 16 August 2025 Saturday 5:34 am

রমজানে লোভনীয় অফারের ফাঁদে পা দেবেন না

 

তুষার খান: রমজান এলেই বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় শুরু হয় অফারের বাহার। ইফতারের সময় রেগুলার মেনু থেকে অর্ডার করা যাবে না কিছু, নিতে হবে তাদের সেট করা ইফতার প্ল্যাটার অথবা আনলিমিটেড অফার। তরুণদের মধ্যে এ নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা রীতিমতো এসব অফার খুঁজে বের করে। তরুণদের একটি অংশ একেক দিন একেক রেস্তোরাঁয় ইফতার করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। একেক দিন একেক অফার উপভোগ করাই তাদের লক্ষ্য। আগে পুরান ঢাকার কিছু রেস্তোরাঁয় সাহ্?রির ব্যবস্থা থাকলেও কয়েক বছর ধরে নতুন ঢাকার বেশ কিছু রেস্তোরাঁয় শুরু হয়েছে সে ব্যবস্থা। ইফতারের পাশাপাশি সাহ্?রিতেও থাকছে আকর্ষণীয় সব অফার। কিছু রেস্তোরাঁ বাদে অন্যগুলোয় অবশ্য সাহ্?রিতে ইফতারের মতো ভিড় হয় না। রাতের বেলার পরিবহন সংকট ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বোধহয় তেমনটা হয়।

রমজানে একশ্রেণির রেস্তোরাঁ শুধু ইফতারসামগ্রী বিক্রি করে। সারা দিন তারা কর্মচারীদের নিয়োজিত রাখে সন্ধ্যার ইফতারসামগ্রী তৈরিতে। দিনের বেলা সেখানে বসে খাবার ব্যবস্থা রাখা হয় না। বিকাল থেকে শুরু হয় ইফতার বিকিকিনি। সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। আরেক ধরনের রেস্তোরাঁ বিকাল থেকে সাহ্?রির সময় পর্যন্ত খোলা থাকে। এসব রেস্তোরাঁয় ইফতারের সময় সাধারণত প্রচণ্ড ভিড় হয়। অনেক গ্রাহককে ফিরেও যেতে হয় অনেক সময়। বিশেষ করে ১৫ রমজানের পর থেকে এসব দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে। ঈদের কেনাকাটায় বের হওয়া মানুষও এদের বড় গ্রাহক। তবে রোজার মাসে অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোয় ইফতারের সময় নিয়মিত মেনুর বাইরে যে সেট মিল বা প্ল্যাটারগুলোর আয়োজন করা হয় এবং অতিথিদের বাধ্য করা হয় সেটিই নিতে, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে ভোজনরসিকদের অনেকের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব প্ল্যাটারে রেস্তোরাঁর পছন্দমতো আইটেম যোগ করা থাকে। জনপ্রিয় কিছু আইটেমের পাশাপাশি বেশ কিছু অজনপ্রিয় আইটেমও সেখানে যুক্ত থাকে এবং সেটির জন্যও তো অর্থ দিতে হয়। নিয়মিত মেনুর চেয়ে ইফতার প্ল্যাটারের খাবারের দামও অনেক ক্ষেত্রে বেশি রাখা হয়। প্ল্যাটার বা সেটের সব খাবার সবার পছন্দ না হলেও সেটি নিতে গ্রাহককে বাধ্য করা খুব একটা গ্রহণযোগ্য চর্চা মনে করি না। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষেরও এক্ষেত্রে যুক্তি রয়েছে। তাদের পক্ষে ইফতারের সময় একত্রে অনেক গ্রাহককে একেক ধরনের খাবার সার্ভ করা কঠিন। সেজন্য একটি, দুটি বা তিনটি সেটের মধ্যে খাবার বাছাইয়ের ব্যবস্থা করা হলে ঠিকমতো সার্ভিস দিতে তাদের সুবিধা হয়। তাদের এ যুক্তি অবশ্য অগ্রহণযোগ্য নয়। তবে এক্ষেত্রে নিয়মিত মেনুর গ্রাহকপ্রিয় আইটেমগুলো নিয়ে লিমিটেড মেনু তৈরি করা হলে তা অধিক সমাদৃত হতো বলেই আমার বিশ্বাস। এ তো গেল প্ল্যাটারের কথা। বর্তমানে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে, যারা বুফে বা আনলিমিটেড খাবারের ব্যবস্থা করে গ্রাহকের জন্য। বেশ বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সেখানে ইচ্ছেমতো খাবার খাওয়া যায়। অনেক খেয়ে পয়সা উসুলের চিন্তা থেকে ভোজনবিলাসীদের একটি বড় অংশ এসব অফার উপভোগ করে থাকে। এ ধরনের অফার মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছাধীন এবং বিশ্বের অনেক দেশেই রেস্তোরাঁয় এ ধরনের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আনলিমিটেড বা বুফে অফারে সাধারণত আমরা যতটুকু খাই, তার চেয়ে বেশি খাওয়া যায় না। কিন্তু ওই রেস্তোরাঁতেই মেনু থেকে অর্ডার করে খেলে যে অর্থ দিতে হতো, সে পরিমাণ খাবার খেয়েই দিতে হয় প্রায় দ্বিগুণ বা তিনগুণ অর্থ। আর অনেক বেশি খেতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা তো খুব বেশি নয়। কেউ যদি অর্থের তুলনায় বেশি খেয়েও থাকে, তবে অন্যরা কম খেয়ে ঠিকই পুরোটা পুষিয়ে দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলা কার্তের (মেনু থেকে অর্ডার করার পদ্ধতি) তুলনায় বুফের খাবারের মান নিম্ন হয়। কাঁচামাল ও ব্যবসার ব্যয়ের সঙ্গে সংগতি রাখতে তেমনটা করা হয়। কথা হলো, এমন সময় বুফে খেলেও রমজানে সারা দিন রোজা রেখে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ঠিক নয়। এখন তো অনেক খাবারের দোকানে আনলিমিটেড পিৎজা ও কার্বোনেটেড পানীয়ের অফার চালু করা হয়। বেশি চিজ খাওয়া এমনিতেই শরীরের জন্য ভালো নয়, আর খালি পেটে অধিক পরিমাণে চিজ দেওয়া পিৎজা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে, তেমনটা মনে করেন চিকিৎসকরা। আর খালি পেটে কার্বোনেটেড ড্রিংকস পেটে গ্যাস তৈরি করে মৃত্যুও ঘটাতে পারে। অথচ এ গুরুপাক খাবারগুলোই এখন শহুরে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যা মোটেই শুভ কিছু নয়।

বাসার খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যারা পরিবারের সঙ্গে থাকেন না, তাদের বাধ্য হয়ে বাইরে ইফতার করতে হয়। অনেকে দিনের পর দিন বাসায় ইফতার করার পর বৈচিত্র্যের জন্য বাইরে ইফতার করে। আর অনেকে তো শখ করে নিয়মিতই বাইরে ইফতার করে। তবে সবারই লক্ষ রাখা উচিত স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারের দিকে। যথাসম্ভব চেষ্টা করা উচিত স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে ইফতার করা। বাণিজ্যিক অফার থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। অফার উপভোগ করতে চাইলে যথেষ্ট খোঁজখবর নিয়ে ভালো মানের রেস্তোরাঁয় তা করা যেতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন, মূল্যছাড় ও ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি’-এর মতো অফার দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানের প্রচারের স্বার্থে। সেখানে যাবতীয় ব্যয় সমন্বয় করেই ছাড় দেওয়া হয়। মান বা পরিমাণের তারতম্যও ঘটতে পারে। অফারের ক্ষেত্রে ক্রেতার লাভই হবে, তেমনটা ভেবে হুড়মুড় করে সেটি উপভোগ করতে যাওয়া সব সময় বুদ্ধিমানের কাজ নাও হতে পারে। বিশেষ করে রমজানে সাহ্রি ও ইফতারে আনলিমিটেড অফার আর অস্বাস্থ্যকর, ভাজাপোড়া বা তেলচর্বি-চিজ, টেস্টিং সল্ট এসব রিচফুড এড়িয়ে চলাই ভালো।

 

কলেজ শিক্ষক