Print Date & Time : 7 July 2025 Monday 12:41 am

রমজানে সুলভ মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি নিশ্চিত করুন

মুসলিম জনগোষ্ঠীর আত্মশুদ্ধি ও সংযমের মাস রমজান শুরু হয়েছে। প্রতিবারের মতো বাজারে সক্রিয় অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। তারা পণ্যমূল্যের কারসাজিতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। ভোক্তাদের বিড়ম্বনা লাঘবে পবিত্র রমজান উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সুলভ মূল্যে মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিন ছিল শনিবার। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাজধানীর খামারবাড়ীর সামনে সুলভ মূল্যের পণ্যের ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজিং ভ্যানে বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, ৯ জন লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের সবার আগ্রহ গরু ও খাসির মাংস নিয়ে। কিন্তু এবার খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে না। গরুর মাংস ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। তাই অনেকেই খালি হাতে ফিরে গেছেন। গরুর মাংস শেষ হওয়ার পরপরই ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে আর ভিড় দেখা যায়নি। গতকাল ঢাকার সাতটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোনো বিক্রয়কেন্দ্রেই ডিম নেই। সব স্থানেই গরুর মাংস শেষ হয়ে গেছে কিছুক্ষণের মধ্যে। ব্রয়লার মুরগি আর দুধ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে বিক্রয়কর্মীদের।

এছাড়া কাগজে-কলমে সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। দাম কিছুটা কমলেও পণ্যের অপ্রতুলতায় দাম বেড়েছে। আত্মশুদ্ধির মাসেও সাধারণ মানুষের পকেটে এহেন অতিরিক্ত চাপ কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কয়েকটি কারণ যৌক্তিক বটে। রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা অত্যধিক, সেগুলো প্রায় সম্পূর্ণই আমদানিনির্ভর। নানা প্রতিকূলতায় একদিকে যেগুলোর আমদানি ব্যয় স্বাভাবিক অবস্থার অপেক্ষা বেশি, অন্যদিকে আমদানির পরিমাণও চাহিদার চেয়ে কম। সরকারি কর্মকর্তারা বরাবরের মতো এবারও বলেছেন, আমদানি যথেষ্ট হওয়ায় রমজানের পণ্য সরবরাহে ঘাটতি থাকবে না। কিন্তু তাদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার বড় ফারাক!
ইবাদত-বন্দেগির মাস হিসেবে বিশ্বের অন্য প্রায় সব মুসলিমপ্রধান দেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভিন্ন পণ্যে রীতিমতো মূল্যহ্রাসের প্রতিযোগিতা থাকলেও এ দেশে বরং ব্যবসায়ীদের উচ্চ মুনাফা করার প্রবণতা চিরকালের। স্বার্থ হাসিলে বরাবর রামজান মাসকেই বেছে নেয় তারা। সরকারি সংস্থাগুলোরও বাজার তদারকিতে অনীহা। বাজার তদারকিতে শৈথিল্যে প্রতিবছর রমজানে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে সরকার নীতিসহায়তা, এমনকি কখনও কখনও শূন্য রেখায় এলসি খোলা এবং শুল্ক হ্রাসের পরও ভোক্তাসাধারণ সুফল থেকে বঞ্চিত।

আমরা মনে করি, আমদানিকারকদের আমদানি দর, শুল্ক ব্যয় ও কারখানায় মজুতের পরিমাণ নিয়মিত তদারকি করলে পণ্যম্যূল্যের কারসাজির স্বরূপ উন্মোচিত হবে। তাই প্রত্যাশা, অন্তত নিত্যপণ্যে শুল্ক হ্রাসসহ বিভিন্ন সুবিধাদানসহ এ ধরনের তদারকি জোরদার করা হবে। অধিকন্তু টিসিবির উদ্যোগে সাশ্রয়ী পণ্যগুলো আগের চেয়ে ব্যাপক পরিসরে বিশেষত সীমিত আয়ের মানুষ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জন্য সুলভ করাও গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসে বাজারে মাছের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল থাকায় আলাদাভাবে মাছ বিক্রির কোনো কার্যক্রম নেয়া হয়নি। তবে নিত্যপণ্য নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যাতে না বাড়ে, সে লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে শূন্যসহনশীলতায় বাস্তবোচিত ব্যবস্থা নিতে হবে।