নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজানে বাজারে স্বস্তি রাখতে রাজধানীর ১০০ স্থানে সাশ্রয়ী দামে ডিম-মুরগি ও কৃষিজাত পণ্য বিক্রি করবে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি নসরুল হামিদ মিলনায়তনে গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিরা যেখানে ডিম ও মুরগির ৮০ শতাংশ উৎপাদন নিশ্চিত করে। সেখানে করপোরেট গ্রুপের অবদান মাত্র ২০ শতাংশ। তারপরও তারা বাজার নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রান্তিক খামারিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠছে। প্রান্তিক খামারিদের প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ ১০.৫০ থেকে ১১ টাকা, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ থেকে ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা খরচ হয়। করপোরেট গ্রুপের উৎপাদন খরচ ডিম ৮ থেকে ৯ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, সোনালি মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। এই কারণে তারা দাম কমিয়ে বাজার দখল করতে পারে।
করপোরেট কোম্পানি আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ফিডের দাম বৃদ্ধি করেছে, কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ফিডের দাম কমলেও বাজারে তার প্রভাব নেই। যখন মুরগির বাচ্চা আমদানি করা হতো, তখন দেশের বাজারে মুরগির বাচ্চার দাম ছিল কম, কিন্তু দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পরেই কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে একচেটিয়া করপোরেট গ্রুপগুলোর হাতে পুরো পোলট্রি বাজার চলে যাচ্ছে। কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেটের হিসাব অনুসারে, দেশে বছরে ৮০ লাখ টন ফিড উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি ফিডে যদি ৫ টাকা অতিরিক্ত নেয়া হয়। তবে এক টন ফিডে চার হাজার টাকা অতিরিক্ত মুনাফা হয়। এই হিসাব অনুযায়ী, ৮০ লাখ টন ফিডে কোম্পানিগুলো বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। এছাড়াও দেশে বছরে প্রায় ১০৪ কোটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদিত হয়। প্রতিটি বাচ্চায় যদি ২০ টাকা অতিরিক্ত নেয়, তবে কোম্পানিগুলো খামারিদের কাছ থেকে বছরে প্রায় দুই হাজার ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। এভাবে তারা ফিড ও মুরগির বাচ্চায় বছরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করে।
ডিম বা মুরগির দাম বাড়লে সারা দেশে আলোচনা শুরু হয়। সরকারও দ্রুত হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু ফিড বা মুরগির বাচ্চার দাম বাড়লে সরকার ব্যবস্থা নেয় না। ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়লে এর প্রভাব সরাসরি প্রান্তিক খামারির ওপর পড়ে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে আস্থাহীনতা এবং অস্থিরতা তৈরি হয়। ফলে একদিকে পোলট্রি শিল্পের সংকট সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে ছোট খামারিরা ব্যবসা থেকে সরে যান। এতে করপোরেট কোম্পানিগুলোর আধিপত্য আরও বাড়ে। ফলে ডিম, মুরগি, ফিড এবং মুরগির বাচ্চার মূল্য অনেক বেশি হয়। ভোক্তারা বিপদে পড়েন এবং উৎপাদকদেরও ক্ষতিতে পড়তে হয়। তাই বাজার থেকে সিন্ডিকেট মুক্ত করার লক্ষ্যে ভোক্তা এবং উৎপাদকের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে, প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার ঘোষিত ডিম মুরগি ন্যায্য দাম বাস্তবায়নে রমজান মাসে ডিম এবং মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারে সঠিক দাম নিশ্চিত করার জন্য উদ্দেশ্যে বিপিএ আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে ঢাকা শহরের ২০ স্থানে এবং পর্যায়ক্রমে ১০০ স্থানে সাশ্রয়ী দামে ডিম, ফ্রোজেন মুরগি এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি শুরু হবে।