রাজধানীর মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটিতে কৃষকের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮৭ শতাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সচেতনতা ও নিরাপদ খাদ্যের অভাবে তারা পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। যা খাচ্ছি তা নিরাপদ কি না, সে চিন্তায় নগরবাসী জর্জরিত। খাদ্য উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ব্যবহƒত কেমিক্যাল এবং খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহƒত কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের নিরাপদ চাষে প্রশিক্ষিত ও উৎসাহিত করছেন। কৃষকদের উৎপাদিত এসব নিরাপদ পণ্য কৃষকের বাজারের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে সরাসরি পৌঁছে দেবে কৃষক নিজেই। অর্থাৎ ভোক্তারা পাবে নিরাপদ খাদ্য এবং কৃষক পাবেন পণ্যের সঠিক মূল্য।

গতকাল নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩নং ওয়ার্ডে কৃষকের বাজারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

রাজধানীর মোহাম্মাদী হাউজিং সোসাইটিতে জামিয়া ইসলামিয়া মুহাম্মাদী আশরাফুল মাদারিস ও এতিম খানার সামনে আয়োজিত কৃষকের বাজারে প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সাভারের ভাকুর্তা থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাইকৃত ১০ নিরাপদ চাষি তাদের উৎপাদিত সবজি ও ফলমূল বিক্রি করবেন।

কৃষকের বাজারের উদ্বোধনী আয়োজনে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন নবীনগর, ঢাকা উদ্যান ও চন্দ্রিমা ইউনিট আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. মিজানুর রহমান, সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বজলুর রশীদ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট জাহাঙ্গীর আলম ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। আরও উপস্থিত ছিলেন এবিএম রেদওয়ানুল হক, সাবেক সহ-সম্পাদক, মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগ, ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের ঢাকা উত্তরের সিটি কো-অর্ডিনেটর মো নজরুল ইসলাম ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

মিজানুর রহমান বলেন, কৃষকের বাজার এলাকাবাসীর জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ছয়টি কৃষকের বাজারের মধ্যে একটি আমাদের এলাকায় স্থাপিত হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য আনন্দের। এ বাজারে কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুবিধা ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতি অনুরোধ তারা যেন নিরাপদ খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বজলুর রশীদ বলেন, কৃষকের বাজারের জন্য ভাকুর্তা ইউনিয়ন থেকে বাছাইকৃত সব কৃষক নিরাপদভাবে সবজি চাষ করেন। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ ও সহায়ক উপকরণ প্রদান করি। সেইসঙ্গে নিয়মিত মাঠপর্যায়ে তদারকি করা হয়। আমরা নিশ্চিত করতে পারি এখানে যে সবজি-ফল ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য পাওয়া যাবে, তা নিরাপদ। এলাকাবাসীর কাছে অনুরোধ, আপনারা কৃষকদের সহায়তা করবেন, যাতে তারা কিছুটা হলেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে। কারণ দেশের অগ্রগতি নিশ্চিতে কৃষক ও কৃষি বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প নেই।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সমগ্র বিশ্বব্যাপী ক্ষুধামুক্তি ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে কাজ করেছে। ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পটিও একই উদ্দেশ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৬টি কৃষকের বাজার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে ৯টি কৃষকের বাজার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের দিকে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে আছি। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ না করায় দেশে স্থূলকায় মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে হƒদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ-টু ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন সম্ভব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক নিরাপদ চাষ কার্যক্রমটি দেশজুড়ে সুবিস্তৃত করা প্রয়োজন।