Print Date & Time : 17 September 2025 Wednesday 8:12 pm

রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানই কাম্য

বৈশ্বিক অতিমারি কভিড-পরবর্তী নতুন স্বাভাবিক সারা বিশ্বেই মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা একপ্রকার স্থবির করে দিয়েছে। এর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে প্রায় বিপর্যস্ত পুরো বিশ্বের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থা। উন্নত-উন্নয়নশীল-অনুন্নত সব দেশেই ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি জনজীবন-জীবিকা নির্বাহে দুঃসহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীল ভূমিকা প্রত্যাশিত। ইতোমধ্যে দলগুলোর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষসহ হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে আগামী কয়েক মাস পরিস্থিতি কোনদিকে গড়ায়, তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা অস্থিরতা বেড়েছে। উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে রাজনীতির মাঠ। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মাঠ দখলের ঘোষণায় দেশের আপামর জনতা উদ্বিগ্ন।

বিশ্লেষকরা বলেন, অর্থনীতির বিপর্যস্ততায় রাজনীতি বিপন্ন হয়ে পড়ে। অর্থনীতি ভালো থাকলে মানুষের আয়ের উপায় ও ক্ষুধা নিবারণ নিশ্চিত থাকে; যায় তখন রাজনৈতিক সহিংসতা হালে খুব একটা পানি পায় না।

একপক্ষ জাতি-রাষ্ট্রের ক্রান্তিকালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তারা এও বলছেন,  কোনো তুচ্ছ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টির অপতৎপরতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণের মঙ্গলের জন্য রাজনীতির বুলি উচ্চারণে জীবন বিপদগ্রস্ত করার অপরাজনীতির আশ্রয় গ্রহণ মোটেও সমীচীন নয়।  যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী কোনো শাসক দীর্ঘমেয়াদে দেশ শাসন করেছেন; তাদের মহানায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে; ওই দেশগুলোকে অনুকরণীয় হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। নিন্দুকেরা বলছে, এটি মাথায় রেখেই বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাদের হাত কর্মীর হাত থেকে ভিক্ষুকের হাতে পরিণত হচ্ছে। তারা ব্যক্তিত্ব হারাচ্ছে, আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কথা ভাবছে না।

আমাদের দেশে কোনোভাবে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলে যেখানে প্রশাসন ও রাজনৈতিক কর্মীরা জনগণের প্রভু হিসেবে চেপে বসেন, সেখানে গণতন্ত্রহীনতা দীর্ঘমেয়াদে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। একটি বিষয় স্বীকার করতে হবে স্থিতিশীলতার নামে জনগণের ভোটাধিকার অস্বীকার করা কিংবা কৌশলে সেটিকে গৌণ করে ফেলা গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। জনগণের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। গত এক যুগে যারা নতুন ভোটার হয়েছে, তারা জানে না; কীভাবে ভোট দেয়া হয়। তরুণ প্রজš§ দেশ জাতির আগামী দিনের কর্ণধার। জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে, সেই গণতন্ত্র দ্বারা জনগণ উপকৃত হয় না। এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, কোনো বিশেষ দলের মনোনয়ন পওয়া মানেই জেতার নিশ্চয়তা! 

যখন ভোটাধিকার উপেক্ষিত হয়, তখন সামাজিক ও প্রশাসনিক নজরদারি ও দায়িত্বশীলতা শিথিল হয়। সামাজিক নজরদারি কম থাকলে সাধারণ মানুষের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। সবাই যখন নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বেপরোয়া হয়ে যায়, সমাজে থেকে জবাবদিহি ও ন্যায়বোধ থাকে না সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। সংঘবদ্ধ অসৎ গোষ্ঠী নানাভাবে চেপে বসেÑ তারা মজুতদারি করে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এ অবস্থা কোনো সুনাগরিকের কাম্য নয়। অনেক কিছুতে আমরা এখন রোল মডেল। অথচ আমাদের তা নির্বাচন রোল মডেল হতে পারল না; এটিই বাস্তবতা। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান ছাড়া বিকল্প নেই।