নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের ৯ মাসে দেশে ৩৮৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৫৮ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘাতে ৪৮ জনের প্রাণ গেছে বলে উঠে এসেছে এক প্রতিবেদনে।
আবার এই ৪৮ জনের মধ্যে ৪৪ জনই নিহত হয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাতে; বাকি চারজনের প্রাণহানি হয়েছে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে।
১০টি জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ‘নিজস্ব সূত্র’ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
৯ মাসের রাজনৈতিক সহিংসতায় পাঁচ হাজার ৪০০ জনের আহত হওয়ার তথ্য জানিয়ে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আছেন ১৮ জন, বিএনপির ছয়জন ও রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি ৩৪ জনের।
বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের ৩৭টি ঘটনায় চারজন নিহত এবং ৯২৯ জন আহত হয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছে আসক।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতেও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে আসক বলেছে, আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের অন্তঃকোন্দলে সংঘর্ষ হয়েছে ৭৩টি। এসব ঘটনায় আটজন নিহত এবং ৮৯৫ জন আহত হয়েছেন। বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ১৭টি ঘটনায় একজন নিহত এবং ২১১ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বিএনপির ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের ৮৪টি সংঘাতের ঘটনায় একজন নিহত এবং এক হাজার ৫০০ জন আহত হয়েছেন বলে আসকের হিসাব।
‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও হেফাজতে মৃত্যু
আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও গত এপ্রিলে ফের র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। গত ৯ মাসে বিচারবহির্ভূতভাবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ১৫ ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
তাদের মধ্যে পুলিশের হাতে ৯ জন, র্যাবের হাতে পাঁচজন এবং একজনের মৃত্যু ডিবি হেফাজতে হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানিয়েছে আসক।
তাদের প্রতিবেদন বলছে, এই সময়ে বন্দুকযুদ্ধে তিনজন, শারীরিক নির্যাতনে সাতজন, হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে একজন এবং অন্যান্য অসুস্থতায় তিনজন মারা যান। এছাড়া পুলিশ হেফাজতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে একটি।
এই সময়ে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৫৪ জন; তাদের মধ্যে কয়েদি ২০ জন, বাকি ৩৪ জন হাজতি।
আসক বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে চারজনকে এই সময়ে তুলে নেয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে একজন ফেরত এসেছেন এবং একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ‘দুজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরাবরের মতো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।’
ধর্ষণের শিকার ৭৩৪ জন
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৯ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৭৩৪ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৪ জনকে, ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন সাতজন। এছাড়া ১২৮ নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।
আসকের সংকলিত তথ্য বলছে, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৩৬৭ জন নারী। এর মধ্যে ২২৮ নারীকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৬৭ নারী।
যৌন হয়রানি কেন্দ্রিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২০৯ নারী ও পুরুষ, যাদের মধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন ১৩৬ নারী ও ৭৩ পুরুষ। যৌন হয়রানির কারণে সাত নারী আত্মহত্যা করেছেন।
অন্যদিকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটেরা ছয় পুরুষকে হত্যা করেছে। এছাড়া শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭২ নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৪৮ নারী। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৯ জনকে এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ছয় নারী।
সংঘাতে প্রাণক্ষয়ে শেষ হয় ৮৩৫ ইউপির ভোট
এ সময় মোট ১৯ গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন মোট ১১ নারী, যাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন।
সাংবাদিক নির্যাতন-হত্যা
গত ৯ মাসে ১৭৯ সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে উঠে এসেছে আসকের প্রতিবেদনে। এর মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ৬৬ সংবাদকর্মী। দুর্বৃত্তদের গুলিতে কুমিল্লায় নিহত হয়েছেন এক সাংবাদিক।
সীমান্ত সংঘাত
এ সময়ে সীমান্তে বিএসএফের গুলি, নির্যাতন ও ধাওয়ায় নিহত হয়েছেন ১২ বাংলাদেশি নাগরিক। এছাড়া সাতজন আহত এবং আটজন অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছ আসক।