প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহীতে কভিড-১৯ টিকা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে খোদ রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। ৭ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত ছয় দিনের গণটিকা কার্যক্রমে মোট এক লাখ ৫০ হাজার মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ব্যর্থ হয়েছে রাসিক। নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ৮৪টি কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করলেও থমকে যায় মাত্র দু’দিনে। টিকা শেষ হওয়ার বিষয়টি মাইকিং করে, মসজিদ, টিকাদান কেন্দ্রসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানানো হয়। এতে টিকা পাওয়া-না-পাওয়া নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন নগরবাসী। তারা বলছেন, টিকা মজুত না থাকলে কিসের ভিত্তিতে আগাম ঘোষণা দিয়েছে রাসিক।
কার্যক্রম শুরুর আগে প্রতিদিন ২৫ হাজার জনকে মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা দেয়া করা হবে বলে জানায় রাসিক। তবে ঘোষণার দু’দিন পার না হতেই রোববার রাতে রাসিক কর্তৃপক্ষ জানায় টিকা শেষ হয়ে গেছে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ওয়ার্ড পর্যায়ে গণটিকা প্রদান কার্যক্রম। সরকার নির্ধারিত শুধু চারটি কেন্দ্রে গতকাল সোমবার সকাল ৯টা শুরু হয় টিকাদান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একটু বিলম্ব হলেও টিকা আসবে। কিন্তু এভাবে আগাম ঘোষণা দিয়ে টিকা কার্যক্রমে যাওয়া ঠিক হয়নি। মানুষ মনে করছেন টিকা আর পাওয়া যাবে না। ঢাকঢোল পিটিয়ে টিকা কার্যক্রম চালু করে আবার ডামাডোল করে বন্ধ করতে হচ্ছে। আগে যেভাবে টিকা দেয়া হতো তেমন ধীরগতি থাকলে এ ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
টিকা নিতে গিয়ে ফিরে আসা অনেকে এখন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। টিকা কেন্দ্রে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধির বালাই লক্ষ্য করা যায়নি। গায়ে গা লাগিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যারা টিকা পাননি তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। টিকা কেন্দ্র টিচার্চ ট্রেনিং কলেজে কথা হয় এমন কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলছেনÑএই নাটকের মানে হয় না, সবাইকে ডেকে নিয়ে টিকা না দিলে এখান থেকেই কভিড ছড়াবে। রাসিক কতখানি টিকা দেবে সেটা না জেনে, পরিস্থিতি আন্দাজ না করেই টিকা কার্যক্রমে নেমেছে। আবার কভিড বেড়ে গেলে রাসিককেই এ দায়ভার নিতে হবে। সঠিক পরিকল্পনার অভাব আর অব্যবস্থাপনাই এজন্য দায়ী।
এ বিষয়ে রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএমএ আঞ্জুমান আরা শেয়ার বিজকে বলেন, আপাতত টিকা না থাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। শুধু সরকার নির্ধারিত চারটি কেন্দ্রে এসএমএস প্রাপ্তদের টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকা হাতে পাওয়া গেলে আবার ওয়ার্ড পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম চালু করা হবে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বারবার আগ্রহীদের বলা হয়েছেÑযারা এসএমএস পাবেন শুধু তারাই কেন্দ্রে আসবেন। কিন্তু এসএমএস না পেয়েও অনেকে এসে ভিড় করছেন। তবে কত টিকা মজুত রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যারা টিকা নেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে এসএমএস পেয়েছেন, শুধু তাদের দেয়া হচ্ছে। নিবন্ধনের ক্রমানুসারে ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে টিকা দেয়া বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু ওয়ার্ড পর্যায় থেকে টিকা প্রাপ্তির যে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম দেয়া হয়েছে সেটি নিয়ে কেন্দ্রে এসেছেন অনেকে।
ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে কথা হয় ১৫ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সোবহানের সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, এসএমএসের বাইরে গেলে কেউ টিকা পাবেন না। ভুল করে অনেকে যেতে পারেন। তাদের জন্য কেন্দ্রে ভিড় হচ্ছে। টিকা শেষ হওয়ার বিষয়টি আমরা মাইকিং করে ও মসজিদের ইমামকে দিয়ে ঘোষণা দিয়েছি। আবার টিকা এলে ওয়ার্ডে দেয়া হবে।
বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (টিচার্স ট্রেনিং কলেজ), পুলিশ হাসপাতাল, আইডি হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএএইচ) চার কেন্দ্রে টিকা দেয়া হচ্ছে। তবে এই চার কেন্দ্রেও দেয়ার মতো টিকাও মজুত নেই বলে জানা গেছে, যা আছে তাতে সর্বোচ্চ এক দিন চলতে পারে।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান শেয়ার বিজকে বলেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে টিকা দিতে নেমে মাইকিং করে বন্ধ করছে। এটা মানুষের মানসিক ভোগান্তিতে ফেলেছে। মানুষ মনে করছেন, তারা আর টিকা পাবেন না। বরং ধীরগতিতে টিকা কার্যক্রম চালু রাখা ভালো ছিল। রাসিক নিজেই আতঙ্ক বাড়ানোর জন্য দায়ী। এটা সিটি করপোরেশন না করলেও পারত।
রাসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গণটিকা কার্যক্রমের দু’দিনে ৭৮ হাজার ৮৭৩ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমদিন শনিবার ৩৪ হাজার ৩৮৫ জনকে এবং দ্বিতীয় দিন রোববার ৪৪ হাজার ৪৮৮ জনকে কভিড টিকা দেয়া হয়েছে। প্রথমদিন নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ৮৪টি কেন্দ্রে ২৭ হাজার ২৫৬ জনকে প্রথম ডোজ মর্ডানার টিকা দেয়া হয়। এছাড়া ৫২৯ জনকে সিনোফার্ম ও ১৪২০ জনকে দেয়া হয়েছে কোভিশিল্ড টিকা।
দ্বিতীয় দিন প্রথম ডোজ মর্ডানার টিকা পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৬৬৪ জন। তাদের মধ্যে ১৮ হাজার ৪৭৩ জন পুরুষ এবং ১৮ হাজার ১৯১ জন নারী। এদিন মডার্না টিকার বাইরে ১৭৪ জনকে সিনোফার্ম এবং ১৬৯০ জনকে দেয়া হয়েছে কোভিশিল্ড টিকা।