প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহীতে নানা প্রজাতির পাখির বাস। এসব পাখির ছবি তুলতে কিংবা সৌন্দর্য দেখতে পদ্মার চর ঘিরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটান পাখিপ্রেমীরা। তবে শামুকখোল পাখিদের রীতিমতো ‘সংগ্রাম’ করেই টিকে থাকতে হয়। শহরে আশ্রয় নেয়া শামুখোলের একটি বড় দলই মাঝেমধ্যে আশ্রয়হারা হয়ে যায়। গাছ ও ডালপালা কেটে দিলে এরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। তারপর ঘুরেফিরে যেন শহরেই আশ্রয় নিতে চায়। এদের এ সবুজ নগরী ছেড়ে যেতে মন চায় না। বর্তমানে শামুকখোলের দলটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনের গাছপালায় আশ্রয় নিয়েছে।
দূর থেকে বোঝা যায়, গাছগুলোর ওপরে পাখি আর পাখি। সকালের দিকে এই পাখিগুলো বাসা ছেড়ে খাবারের সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। সন্ধ্যার আগে আবার দলবেঁধে চলে আসে তাদের আশ্রয়স্থলে।
জানা গেছে, দলটি সাত থেকে আট বছর আগে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর ও আশপাশের গাছগুলো। সেখানে পাখিরা ভালোই ছিল। কেউ তাদের ধরত না, বিরক্তও করত না। কিন্তু ২০১৯ সালের দিকে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণকাজ শুরু করলে অনেক গাছ কেটে ফেলতে হয়। এতে পাখিগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। এসব পাখি তখন থেকেই রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের গাছগুলোয় আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানেও তাদের বেশিদিন ভালো করে থাকার সুব্যবস্থা করতে দেয়নি রামেক কর্তৃপক্ষ। গত বছর থেকে এখানকার গাছগুলোর ডালপালা কাটতে শুরু করে। এখান থেকেও বিতাড়িত হতে হয় তাদের।
এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, পাখিরা যখন-তখন যেখানে-সেখানে মলত্যাগ করে। এতে পাখির বিষ্ঠা রোগীর স্বজনদের গায়ে পড়ে এবং তারা অনেক বিরক্ত হন। এছাড়া হাসপাতাল কখনও পাখির অভয়াশ্রম হতে পারে না। তাই গাছগুলো কাটা হয়েছে। পরে পাখিরা হাসপাতালের পূর্ব পাশের রাস্তার ধারের গাছগুলোয় আশ্রয় নেয়।
জানা গেছে, কয়েক দিন হলো হাসপাতালের পুরোনো সীমানা প্রাচীর ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করার সময় প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। তাই পাখিরা এবার আশ্রয় নিয়েছে হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে। বারবার আশ্রয়হীন হওয়ার পরও পাখিগুলো রামেক হাসপাতাল ছাড়েনি। এক জায়গা নষ্ট হলে অন্য জায়গায় ঠিকই আশ্রয় নিয়ে থাকে। এ যেন তাদেন মায়ার ভুবন।
রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে দেখা গেছে, কিছু শামুকখোল বসে আছে; কিছু উড়ে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে। পাখিদের এই উড়ে যাওয়া-আসার চিত্র দেখছেন অনেক রোগীর স্বজন। তেমনি একজন মাহবুবুল হক। তিনি বলেন, খালার অসুস্থতার কারণে এখানে এসেছি। একটু মন খারাপ ছিল। তবে এখানে আসার পর মনটা অনেক ভালো হয়ে গেছে। পাখিগুলো দেখতে অনেক ভালো লাগছে। দেখে যেন মন জুড়িয়ে যায়। একসঙ্গে এতগুলো বড় বড় পাখি সচরাচর দেখা যায় না।
রাজশাহীর সেভ দ্য নেচার অ্যান্ড লাইফের প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, সাত থেকে আট বছর ধরে পাখিগুলো রাজশাহীতে আছে। এরই মধ্যে গাছ ও ডালপালা কেটে ফেলায় মাঝেমধ্যে পাখিগুলো আশ্রয়হীন পড়ে। প্রতিবারই আমরা প্রতিবাদ করি। আমরা আশা করি পাখিগুলো এখন যেখানে আছে, সেখানে থাকতে পারবে। কারণ প্রকৃতি নিয়েই আমাদের বাঁচতে হয় এবং এরা প্রকৃতিরই অংশ।
শামুকখোল সাইকোনিডি গোত্রের অন্তর্গত বড়সড় আকারের জলচর পাখি। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। রামেক হাসপাতালের এই পাখিগুলো কখনও দলবেঁধে পদ্মার চর আবার কখনও বরেন্দ্র এলাকার ধানক্ষেতে চরতে যায়। দিনশেষে আবার অস্থায়ী নীড়ে ফিরে আসে।