Print Date & Time : 22 July 2025 Tuesday 12:20 am

রাজস্ব আদায়ে বড় ধস বেনাপোল কাস্টম হাউসে

মহসিন আলী, বেনাপোল (যশোর): দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বেনাপোল কাস্টম হাউসে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) ১১ মাসে (জুলাই-মে) রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। কাস্টম হাউসে রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার ৭০ কোটি ১২ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে। যদিও বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের ব্যাপক কড়াকড়ির কারণে ব্যবসায়ীরা এ পথে আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় অর্থবছর শুরুতেই রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে ছিল এ কাস্টম হাউস। পরে করোনার কারণে ভারতের সঙ্গে প্রায় তিন মাস আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আহরণ নেমে আসে অর্ধেকে।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ছয় হাজার ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বেনাপোল কাস্টম হাউসকে। আর চলতি এ অর্থবছরে প্রথম ১১ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয় পাঁচ হাজার ৬০৬ কোটি ৭৫ লাখ  টাকা। এ সময় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আদায় করেছে মাত্র দুই হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৩ লাখ  টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে তিন হাজার ৭০ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ সময় ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য।

এর আগেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টম হাউসে এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি ছিল। সে সময় লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল পাঁচ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল চার হাজার ৪০ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে সময় আদায় হয়েছিল চার হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সেবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, যেভাবে শুরু থেকেই ঘাটতি হয়ে আসছে তাতে চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে না। বারবার রাজস্ব ঘাটতির কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, চাহিদা অনুপাতে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া এবং উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন জানান, করোনায় আড়াই মাস ধরে ভারতের সঙ্গে আমদানি বন্ধ ছিল। ফলে রাজস্ব ঘাটতি আরও রেড়ে যায়। এ পথে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়াতে হবে। দ্রুত পণ্য খালাসসহ ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার  হোসেন রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, করোনার কারণে প্রথমতো আড়াই মাস ধরে আমদানি বন্ধ ছিল। এছাড়া পণ্য খালাসে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বেড়ে যাওয়ায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। এতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ পথে বাণিজ্য বাড়বে, বাড়বে রাজস্ব আদায়ও।

জানা যায়, রাজস্ব আয়ের দিক থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের পরেই বেনাপোল স্থলবন্দরের অবস্থান। প্রতি বছর এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে, যা থেকে সরকারের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর করানোয় তা অনেকটা কমে গেছে।