রাজস্ব পাওনা ২২২ কোটি টাকা দুই প্রতিষ্ঠান বিক্রি ২৫ কোটিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (সিইপিজেড) একটি পোশাক প্রস্তুতকারী ও একটি গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। দুটি প্রতিষ্ঠানই বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করেছে। একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে রাজস্ব পাওনা ১৪৩ কোটি টাকা, অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ৭৭ কোটি টাকা। দুটি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। অভিযোগ রয়েছে, দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষই রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাপাত্তা হয়েছে।

দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট রাজস্ব পাওনা হয়েছে প্রায় ২২২ কোটি টাকা। বেপজার প্রায় দুই কোটি আর শ্রমিকদের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠান দুটির কাছে রাজস্ব, শ্রমিক আর বেপজার পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩৪ কোটি টাকা। তবে দুটি প্রতিষ্ঠান মাত্র ২৫ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি হয়েছে। তবে মাত্র ২৫ কোটি টাকা থেকে শ্রমিক, কাস্টমস ও বেপজার পাওনা নিষ্পত্তির বিষয়ে এনবিআরের মতামত চেয়েছে বেপজা। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের পর বাকি টাকা এনবিআরকে পরিশোধ করতে মত দেয়া হয়েছে।

এনবিআর সূত্রমতে, চট্টগ্রাম ইপিজেডের শিল্পপ্রতিষ্ঠান মেসার্স এঅ্যান্ডবি আউটারওয়্যার লিমিটেড সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানাধীন (ডেনমার্ক) একটি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং মেসার্স নর্ম আউটফিট অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড দেশি মালিকানাধীন গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মেসার্স এ অ্যান্ড বি আউটারওয়্যার লিমিটেড ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারি এবং মেসার্স নর্ম আউটফিট অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠান দুটি দীর্ঘদিন ধরে শিল্প প্লটের ভাড়া, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধে ব্যর্থ। এছাড়া কোম্পানি দুটি কর্মরত প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের দীর্ঘ ছয় মাসের বেতন পরিশোধে অক্ষম। ফলে দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় লিজ চুক্তি বাতিল করে বেপজা। অভিযোগ রয়েছে, দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষই টাকা নিয়ে বিদেশে চলে গেছে।

অপরদিকে সম্প্র্রতি বেপজার চেয়ারম্যান এনবিআর চেয়ারম্যানের মতামত চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বেপজা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপিত আটটি ইপিজেডের মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচনসহ সার্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। চট্টগ্রাম ইপিজেডের শিল্পপ্রতিষ্ঠান মেসার্স এ অ্যান্ড বি আউটারওয়্যার লিমিটেড সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানাধীন (ডেনমার্ক) একটি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং মেসার্স নর্ম আউটফিট অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড দেশি

 মালিকানাধীন গার্মেন্ট এক্সেসরিজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মেসার্স এ অ্যান্ড বি আউটারওয়্যার লিমিটেড ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারি এবং মেসার্স নর্ম আউটফিট অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠান দুটি দীর্ঘদিন ধরে শিল্প প্লটের ভাড়া, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধে ব্যর্থ। এছাড়া কোম্পানি দুটিতে কর্মরত প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের দীর্ঘ ছয় মাসের বেতন পরিশোধে অক্ষম। প্রতিষ্ঠান দুটিতে বিরাজমান শ্রম অসন্তোষের মাধ্যমে জোনের বিনিয়োগবান্ধব শান্তিপূর্ণ কর্মপরিবেশকে বিঘ্নিত করায় এবং তাদের আমদানি-রপ্তানিসংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ২০২০ সালের ৭ জুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে বেপজার সম্পাদিত লিজ চুক্তি বাতিল করা হয়।

আরও বলা হয়, পরবর্তীকালে নিলামের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন গ্রহণ করে দুটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারখানা ভবন, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য মালামাল উম্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে নিলামে বিক্রিতে সর্বোচ্চ দরদাতার অনুকূলে ‘লেটার অব একসেপ্টেন্স’ জারি করা হয়। নিলামে দুটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ২৫ কোটি ছয় লাখ ৬৮ হাজার ৮০০ টাকা দর ওঠে। এর মধ্যে মেসার্স এ অ্যান্ড বি আউটারওয়্যার লিমিটেড ইপিজেডের চীনা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোন্ডা আর্ট ম্যাটেরিয়ালস বিডি কোং লিমিটেড সর্বোচ্চ ১৮ কোটি ৮২ লাখ ৫৬ হাজার সর্বোচ্চ দরে কিনে নেয়। অথচ নিলামে তোলা এই প্রতিষ্ঠানের কাছে শ্রমিকদের পাওনা ছয় কোটি ৮৮ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৮ টাকা, কাস্টমসের পাওনা ১৪৪ কোটি ৭০ লাখ চার হাজার ৫৮৮ টাকা ও বেপজার পাওনা এক কোটি ২৬ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৯ টাকা।

অপরদিকে মেসার্স নর্ম আউটফিট অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড ইপিজেডে কোরিয়ান বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এইচকেডি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড সর্বোচ্চ ছয় কোটি ২৪ লাখ ১২ হাজার ৮০০ টাকায় নিলামে কিনে নেয়। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের কাছে শ্রমিকদের পাওনা দুই কোটি ৬৭ লাখ ৫৬ হাজার ৬৩৫ টাকা, কাস্টমসের পাওনা ৭৭ কোটি ১২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৬ টাকা ও বেপজার পাওনা ৮৫ লাখ ৬৭ হাজার ১১৫ টাকা। নিলামে দুটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ দর উঠেছে ২৫ কোটি ছয় লাখ ৬৮ হাজার ৮০০ টাকা। আর দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে শ্রমিকদের পাওনা ৯ কোটি ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩ টাকা, কাস্টমসের পাওনা ২২১ কোটি ৮২ লাখ ৭৩ হাজার ২৪ টাকা ও বেপজার পাওনা দুই কোটি ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫৪ টাকা।

চিঠিতে বলা হয়, শিল্পপ্রতিষ্ঠান দুটির নিলামে প্রাপ্ত অর্থ থেকে কোনোভাবেই শ্রমিক, কাস্টমস ও বেপজার বকেয়া পাওনা প্রদান সম্ভব নয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরি ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করতে না পারায় জোনে প্রায়ই শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি হচ্ছে এবং জোনের বিনিয়োগবান্ধব, উৎপাদনমুখী ও শান্তিপূর্ণ কর্মপরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। ফলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে ইপিজেডের চীনা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোন্ডা আর্ট ম্যাটেরিয়ালস বিডি কোং লিমিটেড এবং কোরিয়ান বিনিয়োগকারী মেসার্স এইচকেডি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড বন্ধ প্রতিষ্ঠান দুটি সর্বোচ্চ দরে ক্রয় করে। তাই নিলামলব্ধ অর্থ থেকে জরুরি ভিত্তিতে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধপূর্বক দ্রুততম সময়ে নিলামকৃত প্রতিষ্ঠান দুটি নিলাম ক্রেতা দুটি বিদেশি বিনিয়োগকারীর অনুকূলে হস্তান্তর করতে পারলে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। সেক্ষেত্রে এনবিআরের সুচিন্তিত পরামর্শ প্রদান এবং দুটি প্রতিষ্ঠান স্বল্পতম সময়ে পুনরায় চালুর বিষয়ে এনবিআরের সহযোগিতা কামনা করা হয়।

এ বিষয়ে বেপজার মহাব্যবস্থাপক মশিউদ্দিন বিন মেজবাহ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নিলামের ২৫ কোটি টাকার মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা বাদে বাকি টাকা কাস্টমসকে দিতে বলেছে এনবিআর। এনবিআর এমন মতামত দিয়েছে বলে হেড অফিস থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী ২৪ মে শ্রমিকদের টাকা দেয়া শুরু হবে।’ এ বিষয়ে বেপজার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের চেয়ারম্যানের আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ওয়ার্কারদের পাওনা পরিশোধের পর বাকি টাকা এনবিআরকে দেওয়া হবে।’