Print Date & Time : 7 September 2025 Sunday 2:44 am

রাজস্ব ব্যবস্থার অটোমেশন সংস্কার চায় বেসরকারি খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক : লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যকার কর হারের ব্যবধান কমানোর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নন-লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট করের হার আরও ২.৫% কমানোর আহ¡ান জানান। এছাড়া কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কর ও মূসক সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ ব্যবসাবান্ধব অটোমেটেড কর ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।

গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া বাজার হলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪ যৌথভাবে আয়োজিত লাইভ ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা: প্রেক্ষিত বেসরকারি খাত’ অনুষ্ঠানে  ডিসিসিআই সভাপতি স্বাগত বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ হ্রাসের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ প্রণয়নের পাশাপাশি এডিআরের প্রয়োগ, অর্থঋণ ও ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের সংস্কার, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সরকারি খাতে ব্যয় হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমানতের সুদহার ও ঋণের সুদের হার নির্ধারণের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি, ফেডারেল ব্যাংক কর্তৃক ডলারের সুদহার বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আমদানি কার্যক্রমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করেছে ফলে আমাদের রিজার্ভের ওপর তেমন প্রভাব পড়েনি, আশা প্রকাশ করেন আগামী জুনে এলসি ও ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

উপদেষ্টা বলেন, আগামী বাজাটে করের আওতা বাড়ানোর বিকল্প নেই, তবে এ লক্ষ্যে কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার ওপর জোরারোপ করেন, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কর প্রদানের মানসিকতা বাড়ানোর আহ¡ান জানান। সালমান এফ রহমান আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাতের ন্যায় কৃষি, চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতগুলো যথাযথ আর্থিক ও নীতি সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। এছাড়া তিনি বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।    

বিশেষ অতিথি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় আরও বৃদ্ধি করা জরুরি। তিনি বলেন, জিপিডিতে করের অবদান বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই, তবে এলক্ষ্যে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণে আরও মনোযোগী হতে হবে। এছাড়া তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় দ্রুততম সময়ে সব সেবা চালুকরণের আহ¡ান জানান, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে তরান্বিত করবে।    

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাজেট প্রণয়নে বৈশ্বিক পরিস্থিতি, এলডিসি উত্তরণ, স্থানীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ প্রভৃতি বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের বেসরকারি খাতের সক্ষমতা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে এবং বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কারণ

এর সঙ্গে উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারালে সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে তিনি লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানোর ওপর জোরারোপ করেন। পাশাপাশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকে শিল্পের উন্নয়নে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।  

এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, সাম্প্রতি সময়ে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি আমাদের বেসরকারি খাতকে বেশ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করেছে, এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজার জ্বালানির মূল্য হ্রাস পেলে স্থানীয়ভাবে তা সমন্বয় করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমাদের মজুতকৃত গ্যাস দিয়ে আগামী ৫ বছর স্থানীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব, তাই শিল্প খাতে জ্বালানি সক্ষমতা নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে ব্যাংকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়ন এবং ম্যান-মেইড ফাইবারে ব্যবহার বাড়ানোরও প্রস্তাব করেন এ কে আজাদ। এছাড়া তিনি শিল্প খাতে সোলারের ব্যবহার বাড়াতে বিদ্যমান শুল্ক হ্রাসের ওপর জোরারোপ করেন।    

“আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ‘আর্থিক খাত’, ‘শিল্প ও বাণিজ্য’ এবং ‘অবকাঠামো’-এ চারটি সেশনের নির্ধারিত আলোচনায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার, আইসিএবি-এর প্রাক্তন সভাপতি মোহাম্মদ হুমায়–ন কবির, এফসিএ, এনবিআরের প্রাক্তন সদস্য আলমগীর হোসেন, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, সানেম’র নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টে ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী, বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ আশরাফ, আব্দুল মোনেম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনউদ্দিন মোনেম, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম এবং নোকিয়ার কান্ট্রি হেড আরিফুল ইসলাম প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

আলোচকরা কর ও শুল্ক ব্যবস্থার অটোমেশন, আধুনিকায়ন ও সংস্কার, করজাল বৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, টেকসই পুঁজিবাজার নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় সম্পদের কার্যকর ব্যবহার বাড়ানো, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, করপোরেট কর হার কমানো, রপ্তানির সম্ভাবনাময় খাতে বন্ড সুবিধা প্রদান ও পণ্যের বহুমুখীকরণ, দ্রুততম সময়ে অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যক্রম সম্পন্নকরণ, পিটিএ ও এফটিএ স্বাক্ষর প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোরারোপ করেন।       

আলোচনা সভায় ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর, সহ-সভাপতি জুনায়েদ ইবনে আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।