Print Date & Time : 15 August 2025 Friday 4:09 am

রাত নামলেই শুরু হয় পদ্মা থেকে বালি লুটের মচ্ছব

প্রতিনিধি, ফরিদপুর: দিনের আলোতে আনাগোনা না থাকলেও রাত নামলেই শুরু হয় পদ্মা নদীর বুক থেকে বালি লুটের মচ্ছব। পদ্মা নদী ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ও নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলেন প্রভাবশালী কয়েক ব্যাক্তি। অপরিকল্পিতভাবে বালি তোলার কারণে এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হওয়া নদীভাঙনে সহায় সম্পদ হারাচ্ছেন এলাকাবাসী। ক্ষতিগ্রস্তরা অবিলম্বে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ফরিদপুর নদী বন্দরের কয়েকশ মিটারের মধ্যেই তোলা হচ্ছে বালি। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বন্দরটিও। আর অপর প্রান্তের আইজদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী ও নাজির বিশ্বাসের ডাঙ্গী গ্রামসহ অন্তত চার-পাঁচটি গ্রামের ফসলি জমি ভেঙে যাচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, বছরের পর বছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে বলি তোলার কারণে নদী ভেঙে কয়েক কিলোমিটার অভ্যন্তরে চলে এসেছে। তারা দাবি করেন, নদীভাঙনে এরই মধ্যে অন্তত তিনটি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে চলে গেছে নদীর মধ্যে। আরও অন্তত ১০টি গ্রামের অনেকটাই ভেঙে গেছে। স্থানীয়দের দাবি, সম্প্রতি জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রম কিছুটা শিথিল থাকার সুযোগে মরিয়া হয়ে উঠছেন বালি ব্যবসায়ীরা। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে তারা বিভিন্ন জেলা থেকে ড্রেজার ভাড়া এনে বালি তুলছেন।

স্থানীয়দের দাবি, মো. আলম শেখ নামের বালি ব্যবসায়ী নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের গোলডাঙ্গীেেত নির্মিত সেতু সংলগ্ন এলাকায় বালি খালাস করায় সেতুটিও ঝুঁকিতে পড়বে। নদীপাড়ের বাসিন্দা নাজির বিশ্বসের ডাঙ্গীর আব্দুর রব ও মো. রনিসহ কয়েকজন জানান, মো. মজিবর শেখ, মো আলম শেখ, মো. মোফাজ্জেল হোসেন ও মো. আনোয়ার হোসেন আবু ফকিরের নেতৃত্বে কয়েকটি ড্রেজার নদী বুকে বিভিন্ন জায়গা থেকে বালি উত্তোলন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। ওই এলাকার মানুষ জানান, বালি উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায়, কেউ বালি তোলার বিষয়ে কথা বলতে গেলেও হেনস্তার শিকার হতে হয়। ফলে ক্ষতির শিকার হয়েও ভয়ে কেউই মুখ খুলতে চান না।

যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। তারা দাবি করেন, রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতেই এমন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এদিকে আলম শেখ জানান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ফরিদপুর নদী বন্দর এলাকায় বালি খালাসের অনুমতি দেয়ায় সেখানে লেছড়াগঞ্জ বালি মহাল থেকে বালি এনে খালাস করা হচ্ছে। কিন্তু বন্দর এলাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বালি উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রায়ই ব্যবস্থা নেয়া হয় এসব বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে। যদিও স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগ না থাকায় কারা জড়িত রয়েছে তা নিশ্চত হওয়া যাচ্ছে না। এতে সরাসরি কারও বিরুদ্ধে মামলা করাও যাচ্ছে না।