রাবি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দিন

শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির আগামী দিনের কর্ণধার। শিক্ষার্থীরাই একদিন দেশের সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেবে, দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দেবে। দেশের জন্য শিক্ষার্থী মেধা কিংবা কায়িক শ্রম ব্যবহার হোক না কেন, তাকে অবশ্যই সুস্থ, সক্ষম ও সবল হতে হবে। সুস্থ দেহের সঙ্গে সুস্থ মন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এগুলোর একটির অনুপস্থিতি সার্বিক সুস্থতাকে ব্যাহত করে। এ ক্ষেত্রে অবহেলা করলে পরবর্তী সময়ে কর্মজীবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গতকাল শেয়ার বিজের খবরে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসক আছেন ১৮ জন। অথচ মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন কর্মরত চিকিৎসকরাও। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসাসেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তারা বলছেন, যেকোনো অসুখের চিকিৎসায় দেয়া হয় প্যারাসিটামল। এছাড়া বিশেষ রোগে চিকিৎসা দিতে নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। অনেক সময় প্যারাসিটামলই পাওয়া যায় না।

বৈশ্বিক মহামারি কভিডকালে আমাদের স্বাস্থ্য-চিকিৎসা খাতের সীমাবদ্ধতা সামনে আসে। কয়েক বছর আগে মানুষ যে রকম স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারত, নানা কারণে সেটি এখন আর পারছে না। অনেক বেশি মানসিক ও শারীরিক চাপ নিয়েই জীবনযাপন করছেন নাগরিকরা। আমাদের তরুণ সমাজ  ও শিক্ষার্থীরাও এর বাইরে নয়। তারা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার শিকার হচ্ছেন। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিত জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে। কভিডকালে যখন হতাশ হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে, তখন বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গেছে, দেশে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য অবনতির কারণ হিসেবে গবেষকরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অস্বাস্থ্যকর আবাসন ব্যবস্থা, অবাধ ও সমস্যাগ্রস্ত ইন্টারনেটের ব্যবহার, পড়াশোনার চাপ, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পারিবারিক চ্যালেঞ্জ প্রভৃতি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন।

বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পড়াশোনা, থাকা-খাওয়ার খরচই পেয়ে থাকেন, চিকিৎসা খরচ নয়। তারা  খরচের টাকা বাঁচিয়ে চিকিৎসার খরচ সংস্থান করেন। যেখানে পড়াশোনার খরচ জোগাতেই পরিবার হিমশিম খায়, সেখানে শিক্ষার্থী রোগের কথা বলে পরিবারের কষ্ট বাড়াতে চান না। তাদের জন্য রাষ্ট্রের উচিত তাদের জন্য সাশ্রয়ী খরচে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা।

গত ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ হবিবুর রহমান হলের সামনের সড়কে ট্রাকচাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ হাসান হিমেলের মৃত্যুর পর তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আর্থিক সহায়তা দিয়ে প্রশাসন বলেছে, ধাপে ধাপে আরও সহযোগিতা করা হবে এবং হিমেলের মায়ের আজীবন চিকিৎসা খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। একই দুর্ঘটনায় আহত দুই ছাত্রের চিকিৎসার সব খরচও বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছে। এমন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকার জন্য দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অচিরেই শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।