জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় জাটকা সংরক্ষণ অভিযানে জেলেদের জন্য বরাদ্দ ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে ৮০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ কেজি। আবার চাল বিতরণের আগে একটি টোকেন দিয়ে জেলেদের থেকে আদায় করা হচ্ছে ৩০০ টাকা। গতকাল সোমবার উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নে জেলেদের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের (দুই মাসের) চাল বিতরণ কার্যক্রম চলাকালে এমন অভিযোগ করেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জাটকা রক্ষা ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতির চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার এলাকা ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এসব এলাকার জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে সরকার ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চার মাসের জন্য জেলেদের মাঝে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়। ওই বরাদ্দের আওতায় চরবাদাম ইউনিয়নে এক হাজার ৫২ জন তালিকভুক্ত জেলেদের মধ্যে নিবন্ধিত হয়েছেন ৮৮১ জন। বর্তমান হালনাগাদে ৬০০ জন কার্ডধারী হলেও বরাদ্দ এসেছে ৪৪৯ জন জেলের নামে। দ্বিতীয় ধাপে দুই মাসের ৫৭ দশমিক ছয় মেট্রিক টন চাল সম্প্রতি খাদ্যগুদাম থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জমিদারহাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে জেলেদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারি এ সহায়তা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ও রামগতি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী হেকমত আলীর উপস্থিত থেকে ভিজিএফের চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন জসিম ও তার অনুগত লোকজন ও কয়েকজন গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় চলছে চাল বিতরণ কার্যক্রম। এ সময় দেখা যায়, সাদা কাগজে স্ব-স্ব ইউপি সদস্যদের সিল স্বাক্ষর-সংবলিত ৩০০ টাকার বিনিময়ে একটি টোকেন জমা নিয়ে চাল মেপে দিচ্ছেন। টোকেন ছাড়া কাউকে চাল দেয়া হচ্ছে না। ওই টোকেন দেখালে দুটি বস্তায় তাদের দুই মাসের চাল দেয়া হয়। কিন্তু মিটারে পরিমাপ করে দেয়ার কথা থাকলেও তা না করে বালতি দিয়ে মেপে দেয়া হচ্ছে চাল।
স্থানীয় জেলে রতন, হানিফ মাঝি ও নাহিদ জানান, খাদ্য সহায়তা বিতরণকালে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সারওয়ার ভূঁইয়া ৩০০ টাকা করে নিয়ে তাদের হাতে একটি টোকেন ধরিয়ে দেন। পরে ওই টোকেন জমা দিয়ে তাদের চাল নিতে হচ্ছে। ৩০০ টাকা জমা না দিলে কাউকে চাল দেয়া হচ্ছে না। ওজনেও দেয়া হচ্ছে আট থেকে ১০ কেজি কম।
তারা আরও জানান, কয়েকজন জেলে এ অনিয়মের প্রতিবাদ করলে উল্টো তারা নানাভাবে হয়রানি হচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন জসিম বলেন, খাদ্যগুদাম থেকে বস্তাপ্রতি চার থেকে পাঁচ কেজি করে কম দেয়ায় আমাদেরও কম দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে খাদ্যগুদাম ও ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে লোড-আনলোডের কারণে কিছু চাল ঝরে পড়ার কারণে জেলেরা কম পাচ্ছেন।
৩০০ টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্সের টাকা।
তবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাহফুজুর রহমান বলছেন ভিন্ন কথা। ওজনে কম দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, খাদ্যগুদাম থেকে শতভাগ চাল-সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। কোনো চাল কম দেয়া হয়নি। জেলেদের আট থেকে ১০ কেজি করে চাল কম দেবে কেন? উল্টো সেই প্রশ্ন করেন তিনি।
এদিকে ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী হেকমত আলী জানান, অফিশিয়াল ব্যস্ততার কারণে তিনি চাল বিতরণের সময় উপস্থিত থাকতে না পারলেও নিয়মিত খবর রাখছেন তিনি। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জন্য জেলেদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করছেন বলে জানান তিনি। তবে কেন জেলেদের কাছ থেকে উন্নয়ন সংস্থার নামে জন্য টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
রামগতি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, খাদ্যগুদাম থেকে চাল উত্তোলনের জন্য পরিবহন খরচ বাবদ ইউনিয়ন পরিষদকে টনপ্রতি ২৫০ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরপরও জেলেদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করার কোনো মানে হয় না।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মোমিন জানান, চাল ওজনে কম দেয়া ও অর্থ আদায়ের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।