শেয়ার বিজ ডেস্ক :পাকিস্তানের অনলাইন মিডিয়া চ্যানেল ‘রাফতার’–এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক ফারহান মল্লিককে রাষ্ট্রদ্রোহী পোস্ট ও ভুয়া তথ্য প্রচারের অভিযোগে আটক করার পর গত শুক্রবার আদালতে নেয়া হয়। খবর: ডয়চে ভেলে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে পাকিস্তান বর্তমানে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫২তম অবস্থানে রয়েছে। দেশটির সংশোধিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফআইএ ফারহানকে গ্রেপ্তার করে। আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ফারহান মল্লিক ইচ্ছাকৃতভাবে এমন তথ্য প্রচার করেছেন, যা মিথ্যা বা আতঙ্ক সৃষ্টিকারী হতে পারে। সংশোধিত আইনের আওতায় এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। রাফতার চ্যানেল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি, যা মল্লিক বা তার চ্যানেলের বিরুদ্ধে আনা রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগকে সমর্থন করে।
বিগত কয়েক বছরে রাফতার চ্যানেলের বেশ কয়েকটি ভিডিও মিলিয়নের বেশিবার দেখা হয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানের মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান এক বিবৃতিতে বলেছে, সরকারি সংস্থাগুলোর এ ধরনের পদক্ষেপ নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলছে। সংশোধিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী ইমান মাজারি বলেছেন, এই আইনের পরিবর্তনগুলো মূলত মতপ্রকাশ দমন, সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ও সরকারের সমালোচনাকে বন্ধ করার জন্য আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ রয়েছে। দেশটিতে একাধিকবার ইউটিউব, টিকটক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি বর্তমানে সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ নিষিদ্ধ রয়েছে। তবু কিছু কিছু সরকারি দপ্তর এখনো এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ওপর এ চাপের ফলে পাকিস্তানের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে দেশটিতে স্বীকৃত। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া পাকিস্তানের সংবিধানের ১৯ ও ১৯-এ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। তাই দেশটির সাংবাদিকরা আদালতের কাছে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং এ-সংক্রান্ত সব সরকারি নির্দেশনা বাতিল ঘোষণার আবেদন জানান।