নিজস্ব প্রতিবেদক: শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, মন্ত্রণালয়াধীন রাষ্ট্রায়ত্ত বেশকিছু শিল্প কারখানা রয়েছে, যেগুলোকে বর্তমান সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তিনি এ ধরনের শিল্প কারখানার আধুনিকায়নে প্রযুক্তি ব্যবহার, উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। এ বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের নেতৃত্বে ডিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা গতকাল শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের উদ্দেশে মন্ত্রী এ কথা বলেন। শিল্প সচিব কেএম আলী আজম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের স্থানীয় বাজার বেশ বড় এবং আমাদের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার সরকার বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে, ফলে জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করা গেছে।’ তিনি সারা দেশে শিল্পায়ন ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট ক্লাস্টারগুলোয় সার্বিক সহায়তা দানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ৭৫ শতাংশ ব্যবসায়ী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। তবে কুটির, অতিক্ষুদ্র এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের তুলনায় মাঝারি উদ্যোক্তাদের আর্থিক ও কর্মক্ষম জনশক্তির সীমা অনেক বেশি থাকায় তারা প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কটেজ, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের তুলনায় পিছিয়ে থাকেন। এ অবস্থা উত্তরণে তিনি আসন্ন শিল্পনীতিতে সিএমএসএমইদের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ এবং একটি ‘এসএমই আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও সিএমএসএমই খাতে সরকার ঘোষিত সব ধরনের নীতিগত সহায়তা বাস্তবায়ন করতে দেশের সব সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের খাতভিত্তিক একটি ডেটাবেজ তৈরির জন্য একটি বিশেষায়িত প্রকল্প গ্রহণের আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, দেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং বাজার সম্প্রসারণে সম্ভাবনাময় খাতগুলোয় তৈরি পোশাক শিল্পের ন্যায় ব্যাক টু ব্যাক এলসি ব্যবস্থা অনুমোদন করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে চামড়াজাত পণ্যের জন্য কেন্দ্রীয় বন্ডেড ওয়্যারহাউস এবং জাহাজ নির্মাণ, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কর অবকাশ সুবিধা প্রয়োজন।
তিনি উল্লেখ করেন, দেশের কৃষিনির্ভর অঞ্চল যেমনÑযশোর, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেটে কৃষি-পক্রিয়াজাত শিল্পায়ন উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিশেষায়িত কৃষিনির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। ডিসিসিআই সভাপতি এলডিসি উত্তরণের পর ২০২৪ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে ইউরোপের দেশগুলোয় জিএসপি সুবিধা পেতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রদত্ত শ্রম, মানবাধিকার, সুশাসন ও পরিবেশভিত্তিক ২৭টি কনভেনশন বাস্তবায়নে আসন্ন শিল্পনীতিতে একটি রোডম্যাপ অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, ভবিষ্যতে বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে আইওটি, ব্লক চেইন, বিগ ডাটা, ক্লাউড কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স প্রভৃতি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি বিষয়ে তরুণ প্রজš§কে আরও দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে আর্থিক ও নীতি-সংক্রান্ত প্রণোদনা দেয়ার আহ্বান জানান।
শিল্প সচিব কেএম আলী আজম বলেন, আসন্ন শিল্পনীতিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়টিকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তিনি উল্লেখ করেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি সরকার ঘোষিত অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের বেসরকারি খাতের অবদান নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এ লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের অবদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এনকেএ মবিন, সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন, পরিচালক আরমান হক, আশরাফ আহমেদ, দ্বীন মোহাম্মদ, এনামুল হক পাটোয়ারী, গোলাম জিলানী, হোসেন এ সিকদার, খাইরুল মজিদ মাহমুদ, এমএ রশিদ শাহ সম্রাট, মো. রাশেদুল করিম মুন্না, মো. সাহিদ হোসেন, মো. জিয়া উদ্দিন, নাসিরউদ্দিন এ ফেরদৌস এবং ইঞ্জিনিয়ার শামসুজ্জোহা চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।