রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আসিফ নজরুলকে প্রধান করে পর্যালোচনা কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা সংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনা করতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে সভাপতি করে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গতকাল বুধবার ছয় সদস্যের এ কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক এবং রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল হুদাকে কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে।
কমিটিকে ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্ত কাজের অগ্রগতি ও এ সংক্রান্ত গৃহীত সরকারি অন্য পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। কমিটি প্রয়োজনে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। কমিটি প্রয়োজন অনুসারে সভাও করতে পারবে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা সুইফট পেমেন্ট পদ্ধতিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এই বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরে বিভিন্ন সময় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়। কিন্তু এখনও ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত ১৩ জনের গাফিলতি, অবহেলা ও দায় ছিল। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির তথ্য এক দিন পর জানতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা ২৪ দিন গোপন রাখে। ৩৩তম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাঠানো হয়েছিল ফিলিপিন্সে তিনটি ক্যাসিনোতে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার আর পাওয়া যায়নি।

রিজার্ভ চুরির তিন বছর পর ২০১৯ সালে ওই অর্থ উদ্ধারের আশায় নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মামলা খারিজে আবেদন করে আরসিবিসি। ২০২২ সালের এপ্রিলে নিউইয়র্কের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলাটি খারিজ করে দেয়। রায়ে বলা হয়, ওই মামলা বিচারের ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ার’ ওই আদালতের নেই।
এরপর বাংলাদেশ বাংকের পক্ষ থেকে নিউইয়র্কের ‘এখতিয়ারভুক্ত’ আদালতে মামলা করা হয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরেরই কোনো একটি চক্রের সহায়তায় এই অর্থ পাচার হয়েছে বলে তখন ধারণা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। পরে সিআইডির তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ মোট ১৩ জন সরকারি কর্মকর্তাকে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে শনাক্ত করার কথা বলা হয়।

ওই বছরের ১৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা; অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। কিন্তু দফায় দফায় সময় নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি সংস্থাটি। আদালতে বারবার প্রতিবেদন জমা দিতে তারা সময় চাওয়ায় একের পর এক শুনানি পেছাচ্ছে। এরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাও বদল হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের পালাবদলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুদক গত ৩১ ডিসেম্বর সিআইডিতে চিঠি দিয়ে মামলার তদন্তের দায়িত্ব চেয়েছে। তবেু এখন পর্যন্ত সিআইডির পক্ষে কিছু জানানো হয়নি।