ভর্তুকি কমাতে ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল-কুইক রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থার কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার ‘খসড়া সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি): পরিচ্ছন্ন জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কি?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব পরামর্শ ও দাবি তুলে ধরে সংস্থাটি। সিপিডি বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বহুল। বছর শেষে এসব কেন্দ্রকে বিপুল পরিমাণ (ভাড়া) ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। এর পরিবর্তে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘শ্বেতহস্তী’, এটি নতুন কথা নয়। অনেক আগে থেকে এটির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে বলে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। আমাদের মনে আছে, ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রশ্ন করেছেন সরকারদলীয় একজন সংসদ সদস্য। তিনি বলেছেন, ‘রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা হবে কি না?’ উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালগুলোর প্রয়োজন থাকবে না।’
দেশের শতভাগ মানুষ এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। গত ২১ মার্চ দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিনই দেশের সবচেয়ে বড় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন তিনি।
আমাদের বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দ্রুত উৎপাদনে আনতে হবে, যাতে কোনোভাবেই আর ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ প্রয়োজন না হয়। বাস্তবতা হলো চুক্তি অনুযায়ী ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকলেও ভাড়া দিতে হয়। তাই কোনোভাবেই যেন এই খাতে আর ভর্তুকি না বাড়ে, সেদিকে সতর্ক হতে হবে। ভর্তুকি বাড়লে তা সামাজিক নিরাপত্তার অন্য খাতগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সিপিডির সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিদ্যুৎ খাতে সমস্যার সমাধান করতে পারে। সংস্থাটি বলছে, সুশাসনের না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও অনেকে জাতীয় গ্রিডে দিতে পারছে না। অথচ ক্রমান্বয়ে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যাদের ভর্তুকির দরকার নেই, কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যেও বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। এমন একটা কঠিন সময়ে যখন মূল্য যৌক্তিকীকরণের বিষয় উঠছে জোরে, তখন সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে বড় সাশ্রয় করা সম্ভব।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাফল্য অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এ খাতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় তা ম্লান করে দেয়। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকারের বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। অর্থ অপচয়, লোপাট ও জনদুর্ভোগ কমাতে বিদ্যুৎ চুরির পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হবে। নতুন সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র, সঞ্চালন ও বিতরণ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। বৈদেশিক ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ব্যবহার ব্যবস্থাপনা উন্নত করে সাশ্রয়ী হতে হবে। সিপিডির সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব শ্বেতহস্তী পালনের চেয়ে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত।