গত মাসে দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কমেছে। গত মাসে দেশে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। গত বছরের আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০৪ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈধ পথে আসা রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের দাম বেঁধে দেয়ায় রেমিট্যান্সপ্রবাহে টান পড়েছে। কারণ হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে এখন ডলারের দাম ব্যাংকের তুলনায় বেশি পাওয়া যায়। সেখানে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেশি। তাই মানুষ হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।
পোশাক খাতের পর আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের বড় উৎস রেমিট্যান্স। এটি যেখানে বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, সেখানে তা কমছে; এর কারণ খতিয়ে দেখা উচিত। মানুষ যেখানে সুযোগ-সুবিধা পায়, সেখানেই যাবে। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় প্রতীয়মান হয় রেমিট্যান্সপ্রবাহে নেয়া পদক্ষেপ কাজে আসেনি। সাধারণত দুটি কারণে বৈধপথে রেমিট্যান্স আগ্রহ কমছেÑসময় ও ডলারের বিনিময় হার। হুন্ডিতে যখন-তখন অর্থ প্রাপকের হাতে পৌঁছায় এবং তা বেশি দামে। অন্যদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এলে তা বিভিন্ন ছুটির কারণে প্রাপকের হাতে পৌঁছাতে দেরি হয় এবং এ সেবা কেবল অফিস সময়ের মধ্যে পাওয়া যায়।
রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে হলে প্রাপকের কাছে দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আদান-প্রদানে সংশ্লিষ্টদের আগ্রহ বাড়াতে প্রণোদনা বাড়ানো যেতে পারে। লক্ষণীয় যে, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে অনেক পরিবার সচ্ছল হয়েছে এবং দেশের আর্থসামাজিক অবস্থায় তা বড় ভূমিকা রাখছে। তাই রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো গেলে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে।
শ্রমিকরা যৌক্তিক নীতিসহায়তা পেলে দেশের প্রতি দায়বোধ থেকেই বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে আমরা মনে করি। রেমিট্যান্স কমে দেশের কী হয়, তা প্রবাসী শ্রমিক ও তাদের আত্মীদের বোঝাতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে হুন্ডি পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশেই থেকে যায়।
বেশির ভাগ রেমিট্যান্স প্রেরক হুন্ডি পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। অথচ সব রেমিট্যান্স বৈধপথে ফরমাল চ্যানেলে আনা গেলে বিপুল পরিমাণ দেশে আসবে। যেভাবে আসুক, রেমিট্যান্স প্রবাসীদের পরিবার ও স্বজনদের জীবনব্যয় এবং বিনিয়োগে ব্যাপক অবদান রাখছে। কিন্তু যে ‘হুন্ডি ডলার’ বিদেশেই রয়ে যাচ্ছে, সেগুলো কিনছেন কালোটাকার মালিকরা এবং ব্যাংকের ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীরা। এর মাধ্যমেই বিদেশে ব্যবসায়ীদের অবৈধ ব্যবসা; যে ব্যবসার কোনো সুফল পাচ্ছে না দেশ। যেহেতু পুঁজি পাচারকারীরা ব্যাংকঋণ বিদেশে পাচার করার কাজে হুন্ডি ব্যবস্থাকে ব্যবহার করছেন, তাই সাধারণ মানুষকে এ পদ্ধতি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, হুন্ডি পদ্ধতিতে পুঁজি পাচার দমনে দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখা উচিত। পরীক্ষামূলকভাবে এটি করা যেতে পারে।