শেখ আবু তালেব: জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ কমে আসছে রেমিট্যান্সের কারণেই। যদিও একসময় রেমিট্যান্সের কারণেই এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের এক-তৃতীয়াংশই চলে যায় সাংসারিক ব্যয় অর্থাৎ ভরণ-পোষণে।
রেমিট্যান্সের মাত্র সাত শতাংশ যায় সঞ্চয়, বিমার প্রিমিয়াম, বিভিন্ন বিনিয়োগ ও পুঁজিবাজারে। আর বিলাসী ও অপ্রয়োজনে খরচ হয়ে যাচ্ছে রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এই অপ্রয়োজনীয় ব্যয়কে সঞ্চয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জানা গেছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ৬৯ শতাংশই যায় গ্রামীণ বা পল্লি অঞ্চলে। বাকি অংশ যায় শহরাঞ্চলে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের সিংহভাগের ব্যবস্থাপনা বা খরচের কর্তৃত্ব থাকে নারীদের ওপর। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষদের হিসাবে অর্থ এলেও বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে খরচের দায়িত্ব নারীর কাঁধেই চলে যায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঠানো রেমিট্যান্স দিয়ে সম্পদ অর্জন ও সঞ্চয় বাড়ানো সম্ভব। গ্রামীণ এলাকায় বিনিয়োগের সুযোগ কম থাকা ও অর্থ ব্যবস্থাপনার জ্ঞানের অভাবে সঞ্চয় কম হচ্ছে। শুধু উচ্চশিক্ষিতদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ ব্যয় হচ্ছে বিনিয়োগে।
তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ ব্যয় হয় ভরণ-পোষণ ও পোশাকে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ, আসবাব কেনায় তিন দশমিক ৪৬ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যয় হয় বাড়ি নির্মাণ ও জমি ক্রয়ে, ১৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ ব্যয় হয় এসএমইতে বিশেষ করে কৃষি খাতে। এ অর্থ অনাবাদি জমি কিনে তাতে হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খামার স্থাপনে ব্যয় হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়ার খরচের ৪০ শতাংশই ঋণ নিতে হয় স্থানীয় এনজিও ও ব্যক্তিপর্যায় থেকে। এসব ঋণের বিপরীতে দিতে হয় উচ্চ সুদ।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের কারণেই গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ভোগসহ অন্যান্য ব্যয়ে এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। প্রবাসীদের পরিবারের বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরিতে এটি ভূমিকা রাখছে। অনেক প্রবাসীই নিজ পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনকেও বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে যাওয়া প্রবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ব্যবস্থাপনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রয়েছে নারীরাই। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় রেমিট্যান্সের একটি অংশ অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় হচ্ছে। তাদের আর্থিক জ্ঞান দিতে পারলে এই অর্থ সরাসরি বিনিয়োগে আনা সম্ভব। এতে পরিবারটি আর্থিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হতে পারবে।
অপরদিকে গ্রামীণ এলাকায় বিনিয়োগের সুযোগও কম। এজন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, রেমিট্যান্সের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি করতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলায় থাকা গ্রামীণ নারীদের আর্থিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং পল্লি এলাকায় বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসীদের আয়ের ওপর করছাড়সহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া উচিত। এতে বিনিয়োগে প্রবাসীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। এখন রেমিট্যান্সের একটি অংশ চলে যাচ্ছে অনুৎপাদনশীল খাতে। সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিসহ বিলাসী পণ্যে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই খাতের ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য একটু প্রচারণা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রবাসীদের বিদেশযাত্রার ব্যয় কমিয়ে আনতে পারলে ঋণ নেওয়ার হার কমে যাবে। সুদ ও ঋণ পরিশোধ বাবদ অর্থ সঞ্চয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো এই অর্থের পরিমাণ ২৬ হাজার কোটি টাকা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সিংহভাগের উৎস হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।
