রেমিট্যান্সে প্রণোদনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বিদেশে অবস্থানরত লাখো বাংলাদেশির পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমদানি, রফতানি বাণিজ্যের পাশাপাশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে রেমিট্যান্সের ভূমিকা অনেক। তাদের পাঠানো অর্থ দেশে অসংখ্য পরিবারের প্রধান অবলম্বনও। সে হিসেবে রেমিট্যান্স প্রবাহের গুরুত্ব কারও অজানা নয়। বিষয়টি অনুধাবন করে সরকার বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রণোদনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা এবং কালক্ষেপণে অপ্রত্যাশিত জটিলতা তৈরি হয়েছিল। অবশেষে প্রণোদনা পেতে শুরু করেছেন গ্রাহকরা। প্রণোদনার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহে আরও গতি আসবে বলেই প্রত্যাশা।

গতকালের দৈনিক শেয়ার বিজে ‘বৈধ পথে রেমিট্যান্সে উৎসাহ জোগাচ্ছে প্রণোদনা’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। খবরটিতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে দুই শতাংশ প্রণোদনার ঘোষণা দেয় সরকার। এ লক্ষ্যে গত আগস্টে নির্দেশনাও ব্যাংকগুলোকে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের প্রণোদনা বাবদ তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা খরচের প্রক্ষেপণ রয়েছে সরকারের। তবে হতাশাজনকভাবে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর পদ্ধতিগত উন্নয়নসাধনে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে তিন মাস। গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়েন এমন কালক্ষেপণ গ্রহণযোগ্য নয়।

দীর্ঘদিন ধরে আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে রেমিট্যান্স। এর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলে বা কমে গেলে তা কতটা ক্ষতির কারণ হতে পারেÑতা সংশ্লিষ্টদের অজানা নয়। রেমিট্যান্স প্রবাহ সচল রাখতে সরকার যে প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে, তা ইতিবাচক বটে। তবে এ ব্যাপারে এখনও সম্পূর্ণ তথ্য জানেন না অনেক প্রবাসী। ফলে তারা রেমিট্যান্স পাঠাতে কালক্ষেপণ করছেন বা বিকল্প পন্থা বেছে নিচ্ছেন। গত কয়েক মাসে যার প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। এজন্য প্রণোদনার বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি তাদের উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

খবরেই উল্লেখ করা হয়েছে, রেমিট্যান্সের ওপর সরকার ঘোষিত দুই শতাংশ প্রণোদনা পেয়ে সন্তুষ্ট অনেকেই। এতে বৈধপথে অর্থপ্রাপ্তি আরও গতি পাবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে রাজস্ব আয়ও বাড়বে। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। কারণ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পথে অর্থ প্রেরণের নানা পন্থা অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। সে অবস্থা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালানো জরুরি। এক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। কারণ বৈধপথে রেমিট্যান্সের প্রায় পুরোটাই ব্যাংকের মাধ্যমে আসে। ফলে তারা বিষয়টিতে যত দ্রুত প্রবাসীদের অভ্যস্ত করতে পারবেন, রেমিট্যান্সে প্রণোদনার উদ্দেশ্য তত দ্রুত পূরণ হবে বলে আমরা মনে করি।