রেমিট্যান্সে প্রণোদনা নিয়ে জটিলতা নিরসন করুন

দেশের অর্থনীতি দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরেই প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী। আর এই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিদেশে কর্মরত লাখো বাংলাদেশির পাঠানো রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমদানি, রফতানি বাণিজ্যেও তাদের প্রেরিত অর্থের বড় ভূমিকা রয়েছে। সে কারণে ভালো রেমিট্যান্স প্রবাহের গুরুত্বের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবারই জানা। এজন্য সরকার রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে নানা ধরনের সুবিধা দিয়ে আসছে। এবারের বাজেটেও প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় জুনে উল্টো প্রবাসী আয়ের পরিমাণ কমেছে, যা হতাশাজনক। অথচ এটি বাস্তবায়িত হলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রেমিট্যান্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা অপ্রত্যাশিত।
গতকালের দৈনিক শেয়ার বিজে ‘রেমিট্যান্সে দুই শতাংশ প্রণোদনা: নির্দেশনা পায়নি ব্যাংক অন্ধকারে রেমিটাররা’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আজ থেকে শুরু হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পাস হওয়া বাজেটে রেমিট্যান্সের ওপর দুই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অন্তর্মুখী রেমিট্যান্সের ওপর সরকার ঘোষিত দুই শতাংশ প্রণোদনা কীভাবে বিতরণ করা হবে এবং সুবিধাভোগীরা কীভাবে পাবেন সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। ফলে এ বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছেন প্রবাসী এবং তাদের স্বজনরা। যেখানে বাড়তি সুবিধার জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে এমন জটিলতা তৈরি হওয়া কাম্য নয়।
মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। তাদের প্রেরিত রেমিট্যান্স দেশের অসংখ্য পরিবারের ব্যয় নির্বাহের মূল উৎস। অর্থনীতির জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নানাভাবে অবৈধভাবে রেমিট্যান্স দেশে পাঠানোর প্রবণতা রয়েছে। এ কারণে রেমিট্যান্সে প্রণোদনার বিষয়টি প্রস্তাবিত বাজেটে থাকলেও তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা বাড়তি সমস্যা তৈরি করবে। খবরেই উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় এখনও কোনো নির্দেশনা না থাকায় কীভাবে অন্তর্মুখী রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা দেওয়া হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলো সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে থাকায় এটি বাস্তবায়ন করতে পারছে না।
রেমিট্যান্সের মাধ্যমে আসা বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের রাজস্ব আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এছাড়া অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে তা নানা ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হতে পারে সন্দেহ নেই। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের স্বজনদের অনেকেই প্রণোদনাপ্রাপ্তির আশায় চলতি রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত জটিলতার নিরসন করা উচিত। এছাড়া রেমিট্যান্স প্রবাহে অন্য কোনো ধরনের জটিলতা থাকলে তাও দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।