রেমিট্যান্স উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের উদ্যোগ নিন

দেশের মোট অভ্যন্তরীণ আয়ের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসছে রেমিট্যান্স থেকে; কিন্তু এ বিশাল রেমিট্যান্সের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় হচ্ছে ভরণ-পোষণ বা সাংসারিক কাজে। রেমিট্যান্সের ৬৯ শতাংশ অর্থ ব্যবস্থাপনায় গ্রামীণ নারীরা শিক্ষা-প্রশিক্ষণের অভাব এবং গ্রামীণ বিনিয়োগ অবকাঠামোর ঘাটতির কারণে অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করছে। উৎপাদনশীল কাজে লগ্নি না হওয়ায়, মা-মাটি ছেড়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে প্রায় জীবনভর কাজ করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার পরও প্রবাসীরা দেশে ফিরে গড়পড়তা জীবনেই আবার ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। দেশ ও প্রবাসীদের কল্যাণে রাষ্ট্রজনকে তাই এই রেমিট্যান্সের অর্থ উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে।
জনসংখ্যার চাপ আমরা অনুভব করি; কিন্তু বিশ্বমন্দায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যেখানে নাজুক হয়ে পড়ছে, সেখানে আমরা রেমিট্যান্সের ওপরই কোমর সোজা করে দাঁড়িয়েছি। এমনকি চলতি হিসাবের ভারসাম্যপূর্ণ ভিত্তি গড়তে রেমিট্যান্স শক্তিশালী অবদান রাখছে। অথচ প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশের মাটিতে লগ্নি করার নিরাপদ পরিবেশ পাচ্ছে না। ফলে স্ত্রী-সন্তান কিংবা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে এর বেশিরভাগ অর্থ বিলাসী জীবন ও সম্মান বাড়াতেই ব্যয় হয়ে যায়। তাই বিত্তবানদের ব্যবসার অন্যতম প্রধান ভোক্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রবাসীদের পরিবার-পরিজন। ফলে এই কষ্টার্জিত অর্থ দেশের বিত্তবানদের হাতেই ফিরে যায়। আবার অনেক প্রবাসী অন্যের মাধ্যমে লগ্নি করে অর্থ খুইয়ে বসে। বেশিরভাগ প্রবাসীরই দেশের মাটিতে অর্থ লগ্নি করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নারীদের জন্য ভালো ব্যবসার পরিবেশ পল্লি অঞ্চলে না থাকায় তারা পিছু হটে। শহুরে শিক্ষিত প্রবাসীরা ৩১ শতাংশ যে রেমিট্যান্স পাঠায়, তার কিছু অংশ অবশ্য লগ্নি করে থাকে। এখন সরকার যদি গ্রামীণ প্রবাসী পরিবারের মেয়েদের ব্যবসায়
শিক্ষা-প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং বিশেষ অবকাঠামো নির্মাণ করে অর্থ লগ্নি করার সুযোগ করে দেয়, তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, প্রবাসীরা কষ্টার্জিত অর্থের সু®ু¤ ব্যবহার করতে পেরে দেশে ফিরে নিজেদের ব্যবসার হাল ধরতে পারবে, সামাজিক অস্থিরতা কমবে এবং রাষ্ট্রের আয়বৈষম্যে কিছুটা হলেও ভারসাম্য আসবে। একই সঙ্গে প্রবাসীদের আয়ের ওপর করছাড়সহ বিভিন্ন সুযোগ দিলে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। তাছাড়া রেমিট্যান্স সঞ্চয়ে আরেকটি বাধা হলো বিদেশযাত্রায় এনজিও বা অন্যের কাছ থেকে গৃহীত ঋণের সুদ খরচ। এ ক্ষেত্রে বিদেশযাত্রায় খরচ কমানো জরুরি।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫ কোটির বেশি অভিবাসীর মধ্যে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী রেমিট্যান্স প্রেরণে নবম স্থানে রয়েছে। দেশের এই বিশাল আয়ের খাতকে সুরক্ষা দেওয়া এবং এ আয়ের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা কর্তাজনদের দায়িত্ব বলে মনে করি।