রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ে  নিরবচ্ছিন্ন প্রহরা নিশ্চিত হোক

সারাবিশ্বেই রেলকে নিরাপদ বাহন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে রেলপথ পুরোপুরি নিরাপদ হতে পারছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক আগেই শোনা গেছে, অরক্ষিত ক্রসিংয়ে ট্রেন এলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘণ্টা বাজার ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। দেশের কোথাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘণ্টা বাজার ব্যবস্থা আছে কি না, আমাদের জানা নেই।

শুক্রবার বেলা দেড়টায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে নিয়ে যায় চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেন। এতে মাইক্রোবাসে থাকা ১১ জন নিহত হন। এ ঘটনার পর পাহারাদারকে আটক করে পুলিশ। গতকাল দেশের গণমাধ্যমের আলোচিত সংবাদ ছিল এটি। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেভেল ক্রসিং নিরাপদ করার দুটি উপায় আছেÑক. রেললাইনের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়কে উড়ালপথ নির্মাণ করা; খ. ট্রেন আসার সময় যানবাহন আটকে দেয়ার জন্য পথরোধক (ব্যারিকেড) বসানো এবং ট্রেন এলে তা সময়মতো নামিয়ে যানবাহনের চলাচল বন্ধ রাখার জন্য পাহারাদার নিয়োগ। এটি নিশ্চিত করা গেলে হয়তো বেদনাদায়ক প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে না।  রেলে বিপুল বিনিয়োগ করা হয় ট্রেনের গতি বাড়ানোর জন্য। কিন্তু লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত রেখে গতি বাড়ানো যাবে না। প্রতিটি ক্রসিংয়ে ফ্লাশিং লাইট বসাতে হবে, যাতে ট্রেন এলে জ্বলে ওঠে। ক্রসিংয়ে ঘণ্টা বসাতে হবে, যা ১০০ ডেসিবেল শব্দ সৃষ্টি করে।

দেশে অনুমোদিত ও অননুমোদিত দুই ধরনের লেভেল ক্রসিং রয়েছে। অনুমোদিত লেভেল ক্রসিং রক্ষিত বা পাহারাদার-নিয়ন্ত্রিত এবং অননুমোদিত লেভেলক্রসিং অরক্ষিত বা পাহারাদারবিহীন। আমাদের দেশে লেভেল ক্রসিংয়ে বার নামানো থাকলেও তা তুলে পার হয় গাড়িচালক কিংবা পথচারীরা। ভারতে এমন প্রবণতা রোধে কঠোর আইন রয়েছে। আইন না মানলে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

বিশ্বের সব দেশেই রেলকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্মিত হয় সড়ক। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। অথচ দেশের রেলপথগুলো অরক্ষিত এবং এর নিরাপত্তাব্যবস্থা যে দুর্বল, তার বেদনাদায়ক দৃষ্টান্ত শুক্রবার একটি অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ের দুর্ঘটনা। অননুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ে সতর্কবার্তা-সংবলিত রেল কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড রয়েছে। তাতে লেখা ‘এই গেটে কোনো গেটম্যান নেই, পথচারী ও সব ধরনের যানবাহনের চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করবেন এবং যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবেন।’ অননুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার জন্য নাহয় হতাহতরা দায়ী, কিন্তু অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ে কি পর্যাপ্ত সিগন্যালের ব্যবস্থা আছে!

রেলের আইন অনুসারে লাইনের দুই পাশে ১০ ফুট করে মোট ২০ ফুট এলাকায় যেকোনো মানুষ প্রবেশ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আইন পরিপালনে কোনো ব্যবস্থা নেই। রেল জনগণের জন্য এবং তাদের অর্থে নির্মাণ করা হয়। রেলওয়ের নীতিনির্ধারকদের উচিত, অবিলম্বে অবৈধ লেভেল ক্রসিং বন্ধ করে দেয়া এবং অনুমোদিত ক্রসিংয়ে নিরবচ্ছিন্ন প্রহরার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সার্বিকভাবে ক্রসিং ব্যবস্থা নিয়ে বাস্তবোচিত পরিকল্পনা গ্রহণের আগ পর্যন্ত প্রতিটি ক্রসিংয়ে গেটম্যান ও প্রতিবন্ধক বার ওঠানো-নামানো নিশ্চিত করতে হবে।