Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 11:55 pm

রেলসেবা উন্নয়নে অর্থায়নের ঘাটতি যেন বাধা না হয়

মঙ্গলবার শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘আট বছরেও অর্থায়ন মেলেনি: শুরুর আগেই শেষ হচ্ছে রেলওয়ের চার প্রকল্প’ শীর্ষক খবরটি সম্পর্কে চট করে মন্তব্য করার সুযোগ নেই। ইস্যুটি জটিল। খেয়াল করার মতো বিষয়, ২০০৯ সালে রেলওয়ের রফতানি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরের ধীরাশ্রমে একটি কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ, ১০টি ইঞ্জিন ও ১০২টি কনটেইনারবাহী ফ্ল্যাট ওয়াগন কেনার কথা ছিল। সর্বসাকুল্যে ওই প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় আনুমানিক ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকায়। এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের কোচ অপ্রতুলতা নতুন নয়। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, সার্বিকভাবে কোচ সংকট মেটাতে ২০১০ সালে চার প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কথা ছিল, ভারতের ডলার ক্রেডিট লাইনের (এলওসি) আওতায় কোচগুলোর আমদানিব্যয় মেটানো যাবে। কিন্তু ভারতের এক্সিম ব্যাংক যখন প্রকল্প ঋণ অনুমোদনে বছরখানেক পার করে দিলো, ব্রডগেজ কোচ কেনার প্রথম দফা দরপত্রে দুটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে অযোগ্য বিবেচিত হলো ও পরের বার কোনো প্রতিষ্ঠানই অংশ নিলো না এবং (৪১৪টি) মিটারগেজ কোচ কেনার দরপত্র দুবার আহ্বান করেও কোনো সাড়া মিললো নাÑতখনই কেউ কেউ অনুমান করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যেতে পারে প্রকল্পটি। ঘটেছেও তা-ই। একপর্যায়ে প্রকল্পের অর্থায়ন বাতিল করেছে ভারত। এদিকে ‘রফতানি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’র মতো একাধিক কারিগরি প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব দেওয়ার পর বিশ্বব্যাংক সেগুলো বাতিল করে দেয় বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক। কথা হলো, বিশ্বব্যাংক আমাদের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী; প্রতিবেশী ভারতও বন্ধুপ্রতিম। তা সত্ত্বেও উভয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোয় অর্থায়নের প্রস্তাব কেন বাতিল করে দিলো, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।

প্রথমে বলা দরকার, প্রকল্পগুলোয় অর্থায়নের জন্য কেবল মৌখিক আশ্বাস ছিল, নাকি এখানে জোরালোভাবে লিখিত কোনো প্রস্তাব ছিল, সেটি জানা যায়নি। পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়নকে কেন্দ্র করে শুরুতে সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের কিছু ‘মতপার্থক্য’ দেখা দিলেও চূড়ান্তভাবে সংস্থাটির সহায়তায় পরিচালিত অন্যান্য উন্নয়ন কর্মসূচিতে তার কোনো প্রভাব ছিল না বলেই জানা যায়। এদিকে ভারতের এলওসি’তে নাকি উল্লেখ করা হয়েছিল, কেবল উন্নয়নের জন্য জরুরি ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষণ পেলেই ঋণ ছাড় করা হবে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, তবে কি ওই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও প্রতিবেশী দেশের নীতিনির্ধারকদের মনে সামান্য এ সন্দেহও ছিল যে, আলোচ্য প্রকল্পগুলো আমাদের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে? বিপুল দামে চীন থেকে আমদানিকৃত ডেমু ট্রেন নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা অবিমিশ্র সুখকর নয়। এখানে চীনের ওপর দোষ চাপানো কঠিন। এই একই দেশ থেকে উন্নততর অনেক দেশেই ইঞ্জিন-কোচ প্রভৃতি রফতানি হচ্ছে। অথচ সেসব নিয়ে বিরূপ মন্তব্য শোনা যায়নি তেমন। তার মানে, ‘গলদ’ সম্ভবত এখানেই। উচিত হবে, এ ‘গলদ’গুলো চিহ্নিতপূর্বক সেগুলো অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া। বাংলাদেশে রেলসেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি এর সম্প্রসারণ যে প্রয়োজন, সে বিষয়ে বিতর্ক থাকার কথা নয়। লক্ষণীয়, জনবহুল এ দেশে সড়কপথ সম্প্রসারণের সুযোগ সীমিত। ফলে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের প্রতিটি মাধ্যমের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার কাম্য। রেলপথ সেবার সংকোচন বা মানের অবনমন ঘটিয়ে সম্ভব হবে না সেটি। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্প কর্তন নয়, বরং বাস্তবসম্মত গবেষণার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করে সেগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে সরকারকে। আর সেখানে অর্থায়ন ঘাটতি কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, এমনই দেখতে চায় সাধারণ মানুষ।