Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 8:17 pm

রেলের ওয়াগন ক্রয়ে অর্থ অপচয় বন্ধ হোক

‘চাহিদা না থাকলেও মিটারগেজ ওয়াগন কিনছে রেলওয়ে’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা পাঠককে হতাশ করবে বৈকি। অনেক দিন ধরেই রেলের অনিয়ম, দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এখন আমরা জানছি, চীন থেকে কেনা হচ্ছে ৫৮০টি মিটারগেজ ওয়াগন। নতুনগুলো এলে বাদ দেয়া হবে বিদ্যমান ওয়াগনগুলো। এ কেনাকাটায় রাষ্ট্রের ৩২০ কোটি টাকা অপচয় হবে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

সবাই জানেন, বর্তমানে পণ্যবাহী ট্রেনের বেশিরভাগই চলে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে। এসব ট্রেনের প্রায় সবই ব্রডগেজ। কভিডকালে ভারত থেকে রেলপথে পণ্য আমদানি বেড়েছে। এজন্য দরকার হয় ব্রডগেজ ওয়াগন। আর রেলপথে পণ্য পরিবহনে অনেকটাই পিছিয়ে পূর্বাঞ্চল। এরপরও পূর্বাঞ্চলে পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে কেনা হচ্ছে ৫৮০টি মিটারগেজ ওয়াগন।

রেলের পরিবহন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর গত ছয় বছরে দেশে নতুন কোনো মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথগুলোও পর্যায়ক্রমে ব্রডগেজ বা ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। ফলে ২০ বছর পর দেশে মিটারগেজ রেলপথ আর থাকবে না। তাই নতুন কেনা পণ্যবাহী ওয়াগন বেশিরভাগ সময়ই বসিয়ে রাখতে হবে। ফলে আদৌ প্রকল্পটি প্রয়োজন আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার ছিল।

রেলের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক শেয়ার বিজের প্রতিবেদককে বলেছেন, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কপথে পণ্য পরিবহনে সময় রেলে তুলনায় কম লাগে। যাত্রীবাহী ট্রেনকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে প্রায়ই পণ্যবাহী ট্রেন বসিয়ে রাখা হয়। তাই নতুন মিটারগেজ ওয়াগন কেনার প্রকল্প অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।

 সরকার রেলওয়েকে আধুনিক, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও যাত্রী সেবামূলক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। রেলের উন্নয়নে নেয়া হয়েছে ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা এবং চার ধাপে চলছে এর বাস্তবায়ন। কিন্তু এখানে অপ্রয়োজনীয় ওয়াগন কেনা হচ্ছে। এটি কোনো মহাপরিকল্পনার অংশ, প্রশ্ন উঠতেই পারে। বেশ সুযোগ থাকতেও রেলওয়েকে লাভজনক করে তুলতে পারিনি আমরা। বরং দুর্নীতি, চুরি ও অব্যবস্থাপনার কারণে এটি প্রত্যাশিতভাবে এগোতে পারছে না। কেন অপ্রয়োজনে ওয়াগন কেনা হবে? এর আগেও বাজারমূল্য যাচাই না করে বিভিন্ন সময় কোচ-ইঞ্জিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে আনা নিম্নমানের ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট-ডিইএমইউ (ডেমু) ট্রেন কেবল রেলকে বেকায়দায় ফেলেনি; যাত্রীদেরও দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। এসব উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও একই ধরনের ঘটনার পুনঃসংঘটিত হচ্ছে। অকারণে ওয়াগন কেনার ডিপিপি এখনও যাচাই-বাছাই করে দেখার সুযোগ রয়েছে। অভিজ্ঞতা না থাকায় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থের অপব্যবহার হতেই পারে। কিন্তু কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় আমরা মেনে নিতে পারি না। অপ্রয়োজনে ওয়াগন আনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে রেলওয়ের দুর্নীতি ও অর্থ অপচয় রোধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশা।