রেলে গেটকিপারদের চাকরির জটিলতা নিরসন হোক

বাংলাদেশ অত্যন্ত জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। ব্রিটিশ আমলে যখন রেলসেবা চালু হয়েছিল, তখন রেললাইনে এখনকার মতো এত লেভেল ক্রসিং ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ব্যাপক বিস্তৃতি সাধিত হয়েছে। ফলে রেলের লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে গেছে। তবে এসব লেভেল ক্রসিংয়ের অধিকাংশই অবৈধ হিসেবে তকমা পেয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে। এসব লেভেল ক্রসিং দুর্ঘটনার প্রধানতম কারণ। এই দুর্ঘটনা কমাতেই কয়েক বছর আগে প্রকল্প নেয়া হয়েছিল এবং নিয়োগ দেয়া হয়েছিল গেটকিপার। রেল দুর্ঘটনা হ্রাসে এ উদ্যোগ যে অনেকটা ফলদায়ক হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো এ-সংক্রান্ত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে গেটকিপারদের চাকরি থাকবে না। ফলে নতুন করে ওইসব লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত হয়ে পড়তে পারে। তাই এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করি।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘জুনে শেষ হচ্ছে দুই প্রকল্প: রেলের ১৬৮০ গেটকিপারের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা!’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সারাদেশে ৬৫৪টি লেভেল ক্রসিং উন্নয়নে ২০১৫ সালে দুটি প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। এগুলোর আওতায় এক হাজার ৬৮০ গেটকিপারও নিয়োগ দেয়া হয়। প্রকল্প দুটির মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হতে যাচ্ছে। ফলে চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন এক হাজার ৬৮০ গেটকিপার। প্রকল্প দুটি শেষ হলে অরক্ষিত হয়ে পড়বে ৬৫৪টি লেভেল ক্রসিং।

যে কোনো রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো এর নাগরিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কাজেই সমাজে একজন নাগরিকের প্রাণের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু থাকতে পারে না। সেই প্রাণই যদি অরক্ষিত হয়ে পড়ে, তাহলে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বৈকি। দেশে রেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা কম নয়। সাধারণত যে ধরনের দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়, তা হলো রেললাইন পার হতে গিয়ে অন্যান্য যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এসব যানবাহনে অবস্থানকারী যাত্রীরা হতাহত হন। এমন দুর্ঘটনায় বছরে হতাহতের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এমন অপ্রত্যাশিত প্রাণহানি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করি। আর সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যমান প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কাজেই বিদ্যমান প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে যাতে এ ধরনের প্রকল্প চলমান রাখার মাধ্যমে রেলের লেভেল ক্রসিংগুলোর সুরক্ষা বিধান করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি এতদিন ধরে যারা গেটকিপারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন, তাদের জীবিকাও চালু রাখা উচিত বলে মনে করি। কারণ তাদের ওপর পরিবারগুলো অনেকাংশে নির্ভরশীল। কাজেই নতুন প্রকল্প নেয়া হলে যাতে বিদ্যমান জনবল সেখানে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।