রোগীদের জন্য বিনা খরচে পার্ক পাস দেবে কানাডা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কানাডার চিকিৎসকরা এখন থেকে রোগীদের আবার পার্কে বেড়াতে যাওয়ার ব্যবস্থাপত্র দিতে পারবেন। তাই ওমিক্রনের প্রভাব থাকা সত্ত্বেও কানাডার চিকিৎসকরা দেশটির নাগরিকদের পার্কে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলছেন। সুস্থ থাকার জন্য ঘরবন্দি না থেকে বাইরে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এ সুযোগ পাওয়া যাবে বিনা খরচে। খবর: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের কাছে যান রোগীরা। বিশ্রাম নেয়া থেকে শুরু করে ওষুধ সেবন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের এমন নানা ধরনের পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। তবে গত মাসের শেষের দিক থেকে কানাডার ডাক্তাররা তাদের রোগীদের হাসপাতাল ছাড়ার পর পার্কে সময় কাটানোর ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। এ পথ্যের নাম পার্ক পাস। অনেক আগে থেকেই দেশটিতে পার্ক পাস চালু রয়েছে। তবে কভিড-১৯-এর কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এ পাস এবং এজন্য অর্থ খরচ করতে হয়। তবে এখন থেকে রোগীদের বিনা খরচে এ পাস দিতে পারবেন ডাক্তাররা।

দুই বছর ধরে রোগীদের জন্য বিনা খরচে বার্ষিক পার্ক পাস দেয়ার আন্দোলন করছে কানাডার পিএআরএক্স ইনিশিয়েটিভ। সেই আন্দোলনের ফল পেল প্রতিষ্ঠানটি।

‘এমন কোনো অসুখ নেই যা প্রকৃতি সারিয়ে তুলতে পারে না’, বলেন পিএআরএক্স ইনিশিয়েটিভের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান ও পরিচালক মেলিসা লেম। পার্কস কানাডার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার চুক্তি করেছে তার প্রতিষ্ঠান। চুক্তির আওতায় প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০ পাস ইস–্য করবে তারা। এছাড়া একই ধরনের আঞ্চলিক ও স্থানীয় পার্কে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ করে দেবেন তারা। লেমের ভাষায় এটিই কানাডার প্রথম জাতীয় বার্ষিক পাস।

প্রসঙ্গত কানাডার সরকারি সংস্থা এই পার্কস কানাডা। এর অধীন দেশটিতে ৩৮টি জাতীয় পার্ক, তিনটি জাতীয় সমুদ্র সংরক্ষণ অঞ্চল, ১৭২টি জাতীয় ঐতিহাসিক সাইট, একটি ন্যাশনাল আরবান পার্ক ও একটি ন্যাশনাল ল্যান্ডমার্ক রয়েছে। কানাডার প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐহিত্য সংরক্ষণে সহায়তা করে পার্কস কানাডা।

লেম বলেন, পার্কে বেড়াতে যাওয়া সবসময়ই আনন্দের। প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়া যায় এখানে। এতে উপকৃত হন রোগী। তাই তিনি ২০১৯ সালে পিএআরএক্স প্রচারাভিযান শুরু করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত কানাডার চারটি প্রদেশে সম্প্রসারিত হয়েছে এ অভিযান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পার্কআরএক্স আন্দোলন থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে এ অভিযান শুরু করেন।

এ প্রচারাভিযানের মূল উদ্দেশ্য স্বাস্থ্যসেবা খাতের পেশাজীবীদের তাদের রোগীদের প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে উৎসাহ দেয়া। এর মধ্যে থাকতে পারে হাইকিং, বাগান করা অথবা নিছক বাইরে সময় কাটানো। প্রকৃতির মধ্যে সপ্তাহে অন্তত দুই ঘণ্টা যেন রোগীরা সময় কাটাতে পারেন সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্যপেশাজীবীদের উদ্বুদ্ধ করছে এ অভিযান। এই দুই ঘণ্টার মধ্যে যেন ২০ মিনিটের বেশি বিরতি যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার কথা বলা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতিতে সময় কাটানোর অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মানসিক চাপ কমানো, হƒদপিণ্ড সুস্থ রাখা ও কর্মক্ষমতা বাড়ানো। প্রকৃতি কিংবা মনোরম শহুরে পরিবেশ ব্যায়ামের সমান কাজ করে। উদ্বেগ কমাতেও সহায়তা করে।

নতুন করে পার্ক পাস চালু হওয়ার পর পিএআরএক্স নেটওয়ার্কের স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীরা চলতি মাসে দুই হাজার ৫০০ রোগীকে এই পাস দিতে চান। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সীমিত পাস অনুমোদন দেয়ার ফলে একেকজন পেশাজীবী মাসে একটি করে পাস দিতে পারবেন। একই সঙ্গে পার্কের কাছে বসবাসরত বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দিতে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে, যাদের পক্ষে বার্ষিক পাসের ব্যয়ভার করার সামর্থ্য নেই। এ প্রসঙ্গে লেম বলেন, আমরা চাই না পার্ক পাসের জন্য ডাক্তারদের দ্বারস্থ হোক রোগীরা। তাই কানাডার সব প্রদেশে চলতি বছরের মধ্যে রোগীদের জন্য পার্ক পাস চালু করার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

লেমের বিশ্বাস এই পার্ক পাস যেটিকে তিনি পার্ক প্রেসক্রিপশন বলে মনে করেন তা শুধু ব্যক্তি বিশেষের স্বাস্থ্যগত উন্নতিই করবে না, বরং তাদের পরিবেশ সুরক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলবে।