নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে টানা ছয় মাস ধরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছেই চলেছে। বিশেষ করে পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে কয়েক দফায় দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের। এর ফলে রোজা শুরু হওয়ার আগেই অধিকাংশ পণ্যের দাম সীমিত ও নি¤œ আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ব্যর্থ মনে করছেন ভোক্তারা।
তারা বলছেন, প্রতি বছর রোজার আগে নিয়ম করে পণ্যের দাম বাড়ে আর সরকার এটা জেনেও আগে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। রোজায় অন্যান্য ইসলামিক দেশগুলোতে সাধারণত দাম কমে। আর না কমলেও বাড়ে না। কিন্তু বাংলাদেশে তা কখনোই দেখা যায় না। তবে তেলসহ সব প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়লেও এখন অবধি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকার মতো। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।
রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা আবু সাঈদ আহম্মেদ বলেন, ‘গত সপ্তাহে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকায় কেনা সম্ভব হয়েছে। এ সপ্তাহে একই মানের এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে ৬২ টাকা লাগছে। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় পাওয়া গেছে, এ সপ্তাহের সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর ব্যবসায়ীরা বাছাই করা পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন।’ পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা পাইকারিতে ৫৭ টাকা করে কিনছেন। গোপিবাগ রেলগেটসংলগ্ন ব্যবসায়ী কিসমত আলী বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এ কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।’
রাজধানীর বাজারগুলোতে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম রাখা হচ্ছে ৮৩০ টাকা করে। গত সপ্তাহে একই ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৭৯০ টাকা দরে। ৭৬০ টাকা দামের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ টাকা দরে। আর এক লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৫ টাকার মতো।
বাজারে খোলা বা লুজ পামঅয়েলের দাম রাখা হচ্ছে ১৫৫ টাকা লিটার। গত সপ্তাহে এই ভোজ্যতেল বিক্রি হয়েছে ১৪০ লিটার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পামঅয়েলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৫ টাকার মতো। আর যে পামঅয়েল গত সপ্তাহে ১৪৭ টাকা লিটার বিক্রি হয়েছে, এ সপ্তাহে একই মানের পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৫৮ লিটার।
পামঅয়েল সুপারের দাম বেড়েছে লিটারে ১০ টাকা। ১৫০ টাকায় এক লিটার পামঅয়েল সুপার পাওয়া যেত। এ সপ্তাহে একই পরিমাণ সুপার পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা লিটার। গত সপ্তাহে যে পামঅয়েল বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকা। এখন সেই একই পামঅয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৬৩ টাকা লিটার।
খোলা ময়দার দাম কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা। দুই-তিন মাস আগেও ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে খোলা ময়দা। এখন সেই খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার ওপরে। গত এক সপ্তাহে খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা। গত সপ্তাহে ময়দা বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা কেজি।
চিনির দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে বেশকিছু দিন ধরে। নতুন করে এই পণ্যটির দাম কেজিতে ৩ টাকার মতো বেড়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে ভালো মানের চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে। সরকারি বিপণন সংস্থাটি টিসিবির তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে যে চিনি ৭৫ টাকায় কেজি পাওয়া গেছে, এখন সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ টাকা কেজি দরে।
এদিকে, ব্রয়লার মুরগির কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকার মতো। অর্থাৎ গত সপ্তাহে যে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা কেজি দরে, এখন সেই একই মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা কেজি দরে। আর সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩২০ টাকা। গরুর মাংস গত সপ্তাহের মতো ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিমও গত সপ্তাহের মতো ১১৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বরবটি। এ সবজিটি কিনতে ক্রেতাদের কেজিপ্রতি ব্যয় করতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। বাজারে নতুন আসা ঢ্যাঁড়শের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আর ভালো মানের করলার কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। একটু নি¤œমানের করলা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ১৫ টাকায় বিক্রি হওয়া আলুর কেজি এখন ১৮ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে এখন ৬০ টাকা। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতি পিস। শিমের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। শালগমের (ওলকপি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। গাজরের কেজি ৩০ টাকা। মুলার কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দামে পরিবর্তন আসেনি।
কাতল ও রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। শিং ও টাকি মাছের কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। নলামাছ ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। এছাড়া এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছের দাম এখন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। ছোট ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।