রোজা আত্মরক্ষার ঢাল ও দুর্গস্বরূপ

মাওলানা নাসির উদ্দিন: রোজা হবে রোজাদারের জন্য কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনের ঢাল ও দুর্গস্বরূপ। এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি ঢাল এবং দুর্গ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস-৮৯৭২)

আরও একটি হলোÑনবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদার ব্যক্তির আনন্দ উপভোগের দুটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে। একটি ইফতারের সময়; অপরটি স্বীয় প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (বুখারি শরিফ, ১৯০৪ ও মুসলিম শরিফ, ১১৫১/১৬৪)

আল্লাহতাআলা আমাদের সবাইকে এ মাসের পরিপূর্ণ রহমত ও বরকত দ্বারা ধন্য করুন এবং আমাদের ইবাদতগুলো কবুল করে আমাদের নাজাতের ফয়সালা করে দিন। (আমিন)

মহিমাময় রমজান ডাকে মুক্তির পথে

আল্লাহতায়ালা পবিত্র রমজান মাসকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। প্রথম অংশ রহমত; অর্থাৎ এ অংশে আল্লাহতায়ালার বিশেষ রহমত বান্দার প্রতি নাজিল হয়। দ্বিতীয় অংশ হলো মাগফিরাত; অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের বেশি বেশি ক্ষমা করতে থাকেন। তৃতীয় অংশ হলো নাজাত; অর্থাৎ জাহান্নামিদের মুক্তি দেন। এ মাসেই মানুষ ও জিন জাতির মুক্তির সনদ কোরআন মাজিদ একত্রে লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইজ্জতে অবতীর্ণ হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রমজান মাসই হলো সেই মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ।’ (সুরা রাকাহ, আয়াত- ১৮৫)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতারের সময় এমন ১০ লাভ অপরাধীকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দান করেন, যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর যখন রমজানের শেষ দিন আসে, তখন প্রথম রমজান হতে শেষ পর্যন্ত যত লোক জাহান্নাম হতে মুক্তি পেয়েছে, তাদের সবার সমপরিমাণ লোককে একদিনে জাহান্নাম হতে মুক্ত করা হয়।’ (তারগিব; বাইহাকি শরিফ; ও সহি ইবনে হিব্বান)

আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা এবং নিজের জন্য মাগফিরাত কামনা করা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও স্বীয় গুনাহসমূহ ক্ষমা করাতে পারল না, সে অভিশপ্ত। তাই জীবনের কৃত গুনাহের কথা স্মরণ করে বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহতায়ালার দরবারে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজান মাসের প্রতি দিবা-রাতে আল্লাহতায়ালার দরবার হতে (জাহান্নামের) কয়েদিদের মুক্তি দেয়া হয় এবং প্রতি দিবা-রাতে প্রত্যেক মুসলমানের একটি দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়।’ (তারগিব : বাযযার)

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতকে রমজান শরিফের ব্যাপারে পাঁচটি জিনিস বিশেষভাবে দান করা হয়েছে; যা পূর্ববর্তী উম্মতগণকে দান করা হয়নি। (১) রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের ঘ্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। (২) তাদের জন্য নদীর মাছও দোয়া করে এবং ইফতার পর্যন্ত করতে থাকে। (৩) প্রতিদিন তাদের জন্য জান্নাত সুসজ্জিত করা হয়। অতঃপর আল্লাহতায়ালা বলেন, অতিসত্বর আমার নেক বান্দারা নিজেদের ওপর হতে (দুনিয়ার) কষ্ট-ক্লেশ সরিয়ে তোমার কাছে আসবে। (৪) এ মাসে দুষ্ট ও অবাধ্য শয়তানকে আবদ্ধ করা হয়। ফলে অন্যান্য মাসে তারা যেসব খারাপ কাজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারত, এ মাসে সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। (৫) রমজানের সর্বশেষ রাতে রোজাদারকে মাফ করে দেওয়া হয়। সাহাবায়ে কেরাম আনহুম আজমাইনগণ আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে রাত কি শবেকদর? উত্তরে বললেন, না বরং নিয়ম হলো কাজ শেষ হলে মজদুরকে তার মজুরি দেয়া হয়।’ (মুসনাদে আহমদ ও বাইহাকি শরিফ)

উল্লিখিত হাদিসে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহতায়ালার কাছে অনেক প্রিয়। এর উদ্দেশ্য হলো, পানাহার বর্জনের কারণে পেটের ভেতর থেকে উত্থিত হয়Ñএমন দুর্গন্ধকে বোঝানো হয়েছে। দাঁত ও মুখ অপরিষ্কার রাখার কারণে যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়, তা এখানে উদ্দেশ্য নয়। তাই রোজাদার ব্যক্তি অবশ্যই তার দাঁত ও মুখ পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকবে। অন্য এক হাদিসে এভাবে উল্লেখ আছে: নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের (পাহানার বর্জনজনিত) গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধি অপেক্ষা উত্তম।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস-১৯০৪)

তাই আসুন! এই পবিত্র রমজান মাসে, রহমত-বরকত ও নাজাতের তথা মুক্তির মাসে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে কবুল করুন। (আমিন)