রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রস্তাব গুরুত্বপূর্ণ

নির্বিচারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্যাতন, বিতাড়ন, হত্যাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিতে) মামলা করেছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। শরণার্থী সমস্যার সমাধান ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে তত্ত্বাবধান করছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশ তাতে সর্বাত্মক সহায়তা করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ মামলা করলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়ত। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে গাম্বিয়া মামলা করলেও এতে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়বে বলে কূটনীতিকরাও বলছেন।

গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তাম্বাদু গণহত্যা মামলা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ। রুয়ান্ডা গণহত্যার মামলা পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন। আইসিসি মামলাটি নিয়েছে এবং এ নিয়ে শুনানি চলছে। মামলা যে-ই করুক না কেন, এটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। 

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তিও হয়েছে। বাংলাদেশ মামলার পক্ষ হলে মিয়ানমার অজুহাত পেয়ে যেত, দ্বিপক্ষীয় প্রয়াস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। প্রত্যাবাসনের পুরো প্রক্রিয়াটি সে ক্ষেত্রে ঝুলে যেত। তাই মামলা না করে বাংলাদেশ দূরদর্শিতার পরিচয়ই দিয়েছে বলেই প্রতীয়মান।

গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারের প্রতি একটি অন্তর্র্বর্তীকালীন নির্দেশনা জারির আবেদন আছে আইসিসির কাছে। এ পক্ষে নির্দেশনা এলে সেটি গাম্বিয়া এবং রোহিঙ্গাদের নৈতিক বিজয় হিসেবেই গণ্য হবে। বড় অর্জন হবে, গণহত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত হলে মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বনকারীদের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হবে, গণহত্যাকারীদের দোসররা ধিক্কার কুড়াবে।

রোহিঙ্গাসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় গত শুক্রবার নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ছিল ১৩৪ দেশ, বিপক্ষে ৯টি। আর ২৮টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। প্রস্তাবের উল্লেখযোগ্য দিক হলো, প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করে দেখার জন্য তহবিল বরাদ্দ করেছে জাতিসংঘ।

নিন্দা প্রস্তাবে বিরোধিতাকারী দেশ মাত্র ৯টি অর্থাৎ মিয়ানমারের পক্ষে রয়েছে সেগুলো। বিপুল ব্যবধানে নিন্দা প্রস্তাব পাস হওয়ায় এবার নতুন করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে পারি আমরা। অপরাধ করলে নাগরিকদের আইনের আওতায় আনা যেতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই নির্বিচারে নির্যাতন, গণহত্যা মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায় অবশ্য নিতে হবে মিয়ানমারকে, এর পক্ষে বৈশ্বিক জনমত সৃষ্টি করা গেলে একা হয়ে যাবে দেশটি।