নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসা এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশকে।
গতকাল সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, সম্প্রতি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন হায়াশি ইয়োশিমাসা। তাকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বাংলাদেশের পাঠানো সেই অভিনন্দন বার্তার প্রত্যুত্তরে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক চিঠিতে জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং সম্মানজনকভাবে প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে জাপান কাজ করে যাবে। বাংলাদেশের পদক্ষেপে সহযোগিতার পাশাপাশি দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর লক্ষ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতি উন্নতির জন্য জাপান মিয়ানমারকে উৎসাহিত করবে বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাপান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আস্থা, সহযোগিতা ও পারস্পরিক কল্যাণের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আগামী বছর দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি হচ্ছে। সে সময়ে এ ঐতিহাসিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দু’দেশের প্রত্যাশা পূরণের কথাও জানান তিনি।
এদিকে জাপানের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে। এ সময় ইতো নাওকি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি হবে। এজন্য বছরটিকে স্মরণীয়ভাবে উদ্যাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হবে।
সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) করছে জাপান। এখানে জাপানের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসবেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ শুরু হয়ে যাবে আগামী বছরের শুরুতেই বলে উল্লেখ করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত।
জাপানের বিনিয়োগ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়ে রাষ্ট্রদূতকে অভিনন্দন জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে জাপানের। আশাকরি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে জাপান উৎসাহিত করবে। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জাপান সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশছাড়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টায় জাপান ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করবে। রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ।
এর প্রতিউত্তরে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপান সবসময়ই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন চায়। এজন্য বাংলাদেশের পাশে সহযোগিতার হাত রাখবে জাপান।
জানা গেছে, ঢাকা সিটির যানজট নিরসনে পরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সড়কের সঙ্গে মেট্রোরেল লাইন স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ডিএমটিসিএলের অধীনে ঢাকা ও এর আশেপাশে মেট্রোরেলের পাঁচটি লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে লাইন-৬। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
মেট্রোরেল লাইন-৬-এর জন্য ২০১৭ সালে জাপানের কাওয়াসাকি-মিৎসুবিশি কনসোর্টিয়ামকে ২৪ সেট ট্রেন নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়। দুই পাশে দুটি ইঞ্জিন আর চারটি কোচের সমন্বয়ে ট্রেনের সেটগুলো তৈরি হচ্ছে জাপানে।
ডিএমটিসিএলের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দূরত্ব হচ্ছে ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত দূরত্ব হচ্ছে প্রায় ১২ কিলোমিটার। আগামী বছরের ডিসেম্বর মেট্রো লাইন চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। জাপানের প্রতিষ্ঠান জাইকার ঋণে চলছে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন।