রোহিঙ্গা শিশুরা হারানো প্রজন্মের অংশ হওয়ার ঝুঁকিতে

তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে চলা সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে এসে আট লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে থাকতে বাধ্য হয়েছে। এসব শরণার্থীর অর্ধেকেরও বেশি শিশু ও কিশোর-কিশোরী। কক্সবাজারে বসতি স্থাপন করে এসব শরণার্থীর কেউ কেউ আশ্রয়শিবিরে বাস করছে। আবার তাদের অনেকেই স্বাগতিক বাংলাদেশিদের আশ্রয়ে রয়েছে।

আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ না থাকা এবং বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পরিচয় প্রকাশের যথাযথ জায়গা ও সুযোগ না থাকায় এসব শরণার্থী শিশুর অনেকেই একটি হারানো প্রজন্মের অংশ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

নিজেদের পড়াশোনা, লেখালেখি, খেলাধুলা ও সৃজনশীল দিকগুলো বিকশিত করার স্বাধীনতা রয়েছে, তাদের জন্য এমন নিরাপদ জায়গা করে দেওয়া এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরীদের কবিতা এবং আঁকা ছবিগুলো নিজেদের সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের স্বপ্ন ও আশাকেই চিত্রিত করে।

ইউনিসেফ-সমর্থিত সামাজিক কেন্দ্রের লাইব্রেরিতে বসে ১৬ বছর বয়সি ওমর একটি গল্পের বই পড়ছে।

শরণার্থী আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত ১৬ বছর বয়সি ওমর তার বাড়ির নিকটবর্তী একটি সামাজিক কেন্দ্রের নিয়মিত সদস্য। ওমর প্রায়ই কবিতা লেখে। শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে তার তিন বছরের অভিজ্ঞতাগুলোই এসব কবিতায় প্রতিফলিত হয়।

ওমর জানায়, আমরা যখন বাংলাদেশে আসি, তখন আমি আমার সব বই হারিয়ে ফেলেছিলাম। দীর্ঘ সময় আমি কোনো কিছু পড়তে পারিনি। ওমর আরও জানায়, এই জায়গাটিতে একটি লাইব্রেরি আছে জানার পর আমি এখানে না এসে থাকতে পারিনি।

ইউনিসেফ-সমর্থিত একটি সামাজিক কেন্দ্রে ১৭ বছর বয়সি হোসেন প্রকৃতির ছবি আঁকছে। স্কুল থেকে স্নাতক হয়ে বের হওয়ার পরে পেশা হিসাবে হোসেন শিল্পকলাকেই বেছে নিতে চায়। সামাজিক কেন্দ্রে এসে সে প্রতিদিন ছবি আঁকার অনুশীলন করে। কারণ ছবি আঁকার মাধ্যমে সে শান্তি খুঁজে পায়। ছবি আঁকার দক্ষতার কারণেই ভবিষ্যৎ নিয়ে সে বড় স্বপ্ন দেখে।

হোসেন জানায়, ‘একদিন আমি একটি আর্ট স্কুল খুলতে চাই, যেখানে আমি অন্য শিশুদের শখের আঁকা শেখাতে পারি। সে যে-ই হোক না কেন, আমি মনে করি ছবি আঁকা প্রত্যেকের জন্যই একটি ভালো অভ্যাস।’

সামাজিক কেন্দ্রের ১৫ বছর বয়সি বাংলাদেশি সদস্য ইয়াসিনা গত এক বছরে রোহিঙ্গা মেয়েদের সঙ্গে দ্রুত বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে। ইয়াসিনা জানায়, ‘তারা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। তারা এক দিনের জন্যও বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে, আমি এটা কল্পনাও পারি না।’

ইউনিসেফের তথ্য অবলম্বনে