লকডাউনে দিশাহারা যশোরের ২৫ হাজার পরিবহন শ্রমিক

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: কভিড-১৯-এর ঊর্ধ্বগতির কারণে ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আগের ৯ দিনও ছিল লকডাউন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত বন্ধ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাসসহ সব ধরনের চলাচলের বাহন। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন যশোর অঞ্চলের ২৫ হাজার অসচ্ছল পরিবহন শ্রমিক। কর্মহীন হয়ে পড়ায় এরই মধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তাদের সংসারজীবনে। লকডাউন দীর্ঘ হলে সামনে কী অবস্থায় জীবনযাপন করবেন সে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

যশোরে পরিবহন শ্রমিকদের তিনটি সংগঠন রয়েছে। সংগঠন তিনটি হলোÑযশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়ন-২২৭, জেলা ট্র্যাক-ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়ন-৯১৮ ও জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন-৪৬২। এই তিনটি সংগঠনের আওতায় প্রায় ২৫ হাজার পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন। এই শ্রমিকদের বেশিরভাগই অসচ্ছল হতদরিদ্র। পরিবহনে চাকরি করে প্রতিদিনের আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা এখন চোখে সরষে ফুল দেখছেন। ১১ দিন ধরে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের পরিবারে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এমন পরিস্থিতিতে এখনও তারা পাশে পাচ্ছেন না শ্রমিক নেতাদের ও পরিবহন মালিকদের।

শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘদিন এভাবে কর্মহীন হয়ে পড়ে থাকলে তাদের অনেকেরই নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হবে। তারা পরিবহন মালিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। গত বছর শ্রমিকরা সরকারি ও বেসরকারিভাবে কিছু ত্রাণ পেয়ে বেঁচে থাকলেও এ বছর কোনো সাড়া পাননি।

পরিবহন শ্রমিক নূর আলী বলেন, গাড়ির চাকা না ঘুরলে যেখানে আমাদের আয়-রোজগার থাকে না, সেখানে দিনের পর দিন গাড়ি বন্ধ থাকায় আমাদের কঠিন দিন পার করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সাত সদস্যের সংসার আমার। এখন ঘরে কিছু নেই। হাত পাতলেও মানুষ কিছু দিতে পারছে না। মালিকরা এখনও আমাদের পাশে দাঁড়াননি।

একই কথা বলেন শামীম হোসেন নামে আরেক শ্রমিক। তিনি বলেন, ১০ দিন ধরে আমরা বেকার বসে আছি। গত বছর সমিতির পক্ষ থেকে যশোর পৌরসভার দেয়া সামান্য অনুদান পেলেও এবার কিছুই পাইনি।

তিনি আরও বলেন, কয়েকজন পরিবহন মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কারও কাছ থেকে সাড়া মেলেনি। তার মতে, সরকার তাদের পাশে না দাঁড়ালে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

পরিবহন শ্রমিক বাবলু হোসেন বলেন, আমরা শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও মালিকদের জন্য শুধু দিয়েই গেলাম। কিন্তু তারা আমাদের দুর্দিনে কিছুই করছেন না। রোজার মাসটা কীভাবে কাটাব তা-ই ভেবে পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি আবু হাসান বলেন, সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বিষয়টি আমরা হাড়ে হাড়ে বুঝেও কিছু করতে পারছি না। এখন পর্যন্ত বেকার শ্রমিকদের জন্য সরকার কী ব্যবস্থা নেবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে সামনে সংকট কতটা ঘনীভূত হয়, তা বিবেচনায় নিয়ে সমিতির পক্ষ থেকে কোনো কিছু করা যায় কি না ভাবা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।