Print Date & Time : 15 August 2025 Friday 3:06 pm

লকডাউন বাড়ার গুজবে পুঁজিবাজারে বড় পতন

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: কারোনাভাইরাসের কারণে টানা ৬৬ দিন পরে লেনদেন চালুর একদিন পরেই বড় পতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের। এদিনের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের  (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে দেড় শতাংশের বেশি। নিয়মানুযায়ী এটাকে বড় পতন বলে অ্যাখায়িত করা হয়। মূলত করোনা পরিস্থিতিতে আবারও লকডাউনের সময় বাড়তে পারে এমন গুজবেই পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছে।

গতকাল সকালে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে হাউসগুলোতে গুজব ছড়ায় লকডাউনের সময়সীমা আবারও বাড়তে পারে। এ গুজব ছড়িয়া পড়ার পরপরই শেয়ার বিক্রয় আদেশ বাড়তে থাকে। প্রায় সব শেয়ারেই ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যা বেশি পরিলক্ষিত হয়। ফলে সূচকের পতন শুরু হয়, সারা দিনই যা অব্যাহত ছিল। দিন শেষে  প্রধান সূচকের পতন হয় ৬০ পয়েন্ট বা দেড় শতাংশের বেশি। লেনদেন শেষে সূচকের অবস্থান হয় তিন হাজার ৩৯৯ পয়েন্টে।

এদিকে বড় পতনের দিন অপরিবর্তিত ছিল রেকর্ড পরিমাণ শেয়ার ও ইউনিটের দর। গতকাল মোট ৩২৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত ছিল। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দর বাড়তে দেখা যায় মাত্র ২৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়াররের। বিপরীতে দর কমেছে ৭০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের।

অন্যদিন লেনদেন শুরুর একদিন পরেই ওষুধ ও রসায়ন খাতে উল্টোচিত্র দেখা গেছে। আগের কার্যদিবসে যেখানে এ খাতের তালিকাভুক্ত ৩২ কোম্পানির মধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়তে দেখা গিয়েছিল। গতকাল সেখানে এ খাতের মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়তে দেখা যায়। এদিকে প্রথম দিনের মতো বিবর্ণ ছিল ব্যাংক খাত। গতকাল এ খাতের একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরও বাড়তে দেখা যায়নি। তবে এ খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরই অপরিবর্তিত দেখা যায়। সারাদিনই এ খাতের শেয়ারের ছিল ক্রেতার অভাব।

ব্যাংক খাতের মতো দর বাড়তে দেখা  যায়নি বিমা খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারেরও। এ খাতে তালিকাভুক্ত মোট কোম্পানির সংখ্যা ৪৭। এর মধ্যে গতকাল তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়নি। পক্ষান্তরে দর বাড়ে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। বাকিগুলোর মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমেছে। অবশিষ্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল।

অন্যদিকে ব্যাংক, বিমা, ওষুধ ও রসায়ন খাতের মতো বিবর্ণ দেখা যায় মিউচুয়াল ফান্ড, প্রকৌশল, সিমেন্ট, খাদ্যসহ অন্যান্য খাত। নিদিষ্ট কিছু কোম্পানি ছাড়া খাতভিত্তিক কোনো শেয়ারেই চোখ ছিল না বিনিয়োগকারীদের।  তবে গতকাল টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতার কারণে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। প্রথম কার্যদিবসে মোট লেনদেন ছিল ১৪৩ কোটি টাকা। গতকাল যা বেড়ে হয়েছে ১৯৭ কোটি টাকা।

এদিকে গতকালের বাজার চিত্র নিয়ে কথা বললে বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হওয়ার কারণেই পতন হয়েছে। তারা ভীত হয়ে কম দরে শেয়ার বিক্রি করতে চেয়েছেন। যে কারণে শেয়ারদরর কমেছে। তারা বলেন কোনো কারণে যদি সরকারি ছুটি বাড়ে কিংবা লকডাউন দেওয়া হয় তাতে কিন্তু শেয়ারদর কমে যাচ্ছে না। পোর্টফলিও থেকে শেয়ার উধাও হয়েও যাচ্ছে না। তাহলে কেন তারা ভয় পাবেন।

এই প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য কম।  তারা যে কোনো গুজবে বেশি কান দেন।  আর এ কারণে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। যে কোনো অবস্থায়ই তাদের ভেবে-চিন্তে কাজ করা উচিত। হুটহাট সিদ্ধান্তের কারণে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।