প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: মেঘনা নদীতে জোয়ারের কারণে স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট পানি বেড়ে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকা ডুবে গেছে। গত চার দিনে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনে তৈরি হয়েছে নানা দুর্ভোগ। গতকাল শনিবার বেলা ২টা থেকে এ জোয়ার শুরু হয়। এতে রামগতি-কমলনগর উপজেলার নদীর তীর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরেও জোয়ারের স্রোত দেখা যায়।
সরেজমিন দেখা যায়, কোমর পানিতে সাঁতরে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। জোয়ারের কারণে বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হয়েছে।
কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের লুধুয়া বাগারহাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ফলকন উচ্চ বিদ্যালয়। জোয়ারের কারণে ছুটি পেয়ে কোমর পানিতে নেমে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে শিশু শিক্ষার্থীরা সাঁতরে বাড়ি ফিরেছে। এ ছাড়া আশপাশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠদানে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার মাছঘাট এলাকায় জেলেরা ঘাটে ফিরেছেন। কিন্তু মাছ শিকারে ক্লান্ত শরীরে ঘাটে ফিরে তারা আরও বেশি বিপাকে পড়েছেন। কূলে উঠতে হয় বুক পরিমাণ পানি অতিক্রম করে। এ সময় মাথায় মাছভর্তি টুকরি নিয়ে জোয়ারের পানিতে তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গত চার দিনের জোয়ারে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারের তীব্র স্রোতে ও ভাটার টানে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ভেঙে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। সড়কগুলো দিয়ে যাতায়াতে চরম বিপর্যয়ে পড়তে হচ্ছে। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেয়ার মতো গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না সড়কের কারণে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমলনগরের চরমার্টিন, চরকালকিনি, চরফলকন, পাটারিরহাট, সদরের চররমণী মোহন, রায়পুরে উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও রামগতির চরআবদুল্লাহসহ প্রায় ১৩টি ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কমলনগরের চরফলকন উচ্চ বিদ্যালয় ও চরকালকিনির মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ জোয়ারে কোমর পরিমাণ পানিতে ডুবে গেছে। বাধ্য হয়ে ওই পানি অতিক্রম করেই বাড়িতে ফিরতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
সদর উপজেলা থেকে রামগতি উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৩৭ কিলোমিটার মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নেই। গেল একনেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও দৃশ্যমান নয়।
স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার কাজ রেখে পালিয়েছেন। ঠিকাদারদের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও জড়িত। শুধু বালু-সংকট দেখিয়ে তারা কাজ করছেন না। তাদের কারণে প্রতিদিন কেউ না কেউ নদীভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছেন। কাছাকাছি দূরত্বে চাঁদপুরে বালু পাওয়া না গেলে অন্যত্র থেকে আনার ব্যবস্থাও তারা করেন না। উপকূলীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগে রেখে তারা বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে যাচ্ছেন।
কমলনগরের চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছায়েফ উল্যা বলেন, তীব্র স্রোতে উপকূলে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। এতে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মানুষ খুব দুর্ভোগে রয়েছে।
রামগতি উপজেলার চরআবদুল্লাহ ইউপির চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মঞ্জুর বলেন, আমার ইউনিয়নটি মেঘনা নদীবেষ্টিত। প্রতিটি ভিটা জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। টানা জোয়ারের কারণে অনেক ঘরে চুলাও জ্বলেনি।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, কয়েক দিন টানা জোয়ার হচ্ছে। এতে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা দুর্ভোগে রয়েছে। আমি সব সময় তাদের খোঁজ নিচ্ছি। এ ছাড়া বাঁধ নির্মাণকাজটিও বন্ধ রয়েছে। রোববার এমপি মহোদয় এলাকায় আসবেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।
লক্ষ্মীপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে মেঘনায় প্রায় তিন ফুট পানি বেড়ে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় নদীতে তীব্র স্রোত রয়েছে। এতে বাঁধ নির্মাণকাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া বালু সংকটও রয়েছে।