জুনায়েদ আহম্মেদ : ভাদ্র মাসের শুরু থেকেই লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন বাজারে পাকা তাল বিক্রি হচ্ছে। অনেকের বাড়িতে শুরু হয়ে গেছে তালের পিঠা তৈরির ধুম। ‘ভাদ্র মাসে তাল না খেলে ছাড়ে না কালে’ বলে লক্ষ্মীপুরের গ্রামাঞ্চলে এমন প্রবাদ রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, তালের কোনো অনুমোদিত জাত নেই। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই তালগাছ জšে§। মৌসুমি ফল তাল ও তাল গাছের বহুবিধ ব্যবহার এবং পুষ্টিগুণ বিবেচনায় দেশি ফলের মধ্যে তালের অবস্থান অনেক ওপরে। তালগাছ রোপণের ১০ থেকে ১৫ বছর পর গাছে ফল ধরে। ভাদ্র মাসে ফল পাকতে শুরু করে। পাকা ফলের ঘ্রাণ তীব্র সুগন্ধযুক্ত। স্বাদে মিষ্টি থেকে পানসে মিষ্টি হয়ে থাকে। পাকা তাল প্রাকৃতিক নিয়মে গাছ থেকে ঝরে পড়ে।
তালগাছের গোড়ার অংশ দিয়ে ডিঙি নৌকা তৈরি করা হয়। এছাড়া শক্ত ও মজবুত বলে ঘরের খুঁটি, আড়া, রুয়া, কৃষকের লাঙলের ঈশ তৈরিতে ব্যবহƒত হয়। তালপাতা দিয়ে হাতপাখা, মাদুর, টুপি, ঘরের ছাউনি, চাটাই, ছাতা, লাকড়ি হিসেবে ব্যবহƒত হয়। গাছের আঁশ থেকে টুপি, ঝুড়ি, ব্রাশ, পাপোশ, বাস্কেট ও মাছ ধরার চাঁইসহ বিভিন্ন ধরনের সৌখিন সামগ্রী তৈরি হয়। পুরুষ গাছের ফুল বা জটা হতে রস সংগ্রহ করে গুড়, পাটালি, ভিনেগার, পিঠা, বড়া, লুচি প্রভৃতি তৈরি করা হয়। পাকা তালের রস দিয়ে পিঠা, বড়া, ক্ষীর, পায়েস বানানো হয়। এছাড়া কচি ও কাঁচা তালের নরম শাঁস মুখরোচক ও পুষ্টিকর খাবার।
শহরের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী জানান, মেয়ের জামাই বাড়িতে তালের পিঠা পাঠানোর জন্য জকসিন ও মান্দারী বাজার ঘুরে ১০ জোড়া তাল ৮০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। সদর উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের মতিন পাটোয়ারী জানান, রাস্তার পাশে ও ফসলি জমির পাশে আমার ২৫ থেকে ৩০টি তালগাছ রয়েছে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের দিকে তালকুড় বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি। মৌসুমের শুরুতে তাল বিক্রি করলে বেশ ভালো দাম পাওয়া যায়। প্রতি বছর এ গাছগুলো থেকে তিনি ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় করেন। বশিকপুর বাজারের তাল বিক্রেতা বাবু জানান, ভালো ও সুস্বাদু তালের চাহিদা থাকলেও সে তুলনায় সরবরাহ কম। তালগাছের সংখ্যাও অনেক কমে গেছে।
কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউপি চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহ জানান, সহজ রোপণ পদ্ধতি, কম যতেœ উৎপাদন ও বৃদ্ধির ফলে গ্রামীণ সড়ক-মহাসড়ক, বেড়িবাঁধ, পুকুরপাড়, খালপাড়, নদীরপাড়, জমির আইল, পতিত জমি ও বসতবাড়ির শেষ সীমানায় তালগাছ রোপণ করা হয়। এ গাছের গভীর মূল ও শাখা-প্রশাখা নেই বলে জমির আইলে রোপণে খাদ্যপুষ্টির জোগান বাড়ানো সম্ভব। লক্ষ্মীপুরের মুক্তিযোদ্ধা কাজল কান্তি দাস জানান, আজ থেকে তিন দশক আগেও লক্ষ্মীপুরজুড়ে প্রচুর তালগাছ ছিল।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিজাম উদ্দিন জানান, তালের শাঁসে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাল শাঁসে রয়েছে শর্করা, স্নেহ ও আমিষ। কৃত্রিম উপায়ে তৈরি পানীয়, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার না খেয়ে তাল খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যসম্মত বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন জানান, প্রতি বছর পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তালের আঁটি রোপণ করা হয়। শক্ত, মজবুত ও গভীর মূল রয়েছে বলে ঝড়-তুফান, টর্নেডোয় বাতাস প্রতিরোধ এবং মাটির ক্ষয়রোধে তালগাছের ভূমিকা অতুলনীয়। তাই কৃষককে তালগাছ না কেটে আরও লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর