শেয়ার বিজ ডেস্ক : টানা বৃষ্টি ও মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিবন্দি লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপকূলীয় এলাকার প্রায় ২০টি গ্রামের বাসিন্দা। অন্যদিকে মৌলভীবাজারে টানা বৃষ্টি এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার মনু, ধলাই এবং কুশিয়ারা নদীতে পানি বেড়েছে। আর জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা।
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে তৈরি প্রতিবেদন:
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিবন্দি লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপকূলীয় এলাকার প্রায় ২০টি গ্রামের বাসিন্দারা। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকার অনেক গবাদিপশু মেঘনার জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। স্থানীয়দের ধারণা, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ এবং মেঘনা নদীর প্রবল জোয়ারে নদীর বিভিন্ন চরের এসব প্রাণী পানিতে ভেসে গেছে। গত শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার, কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদী তীরবর্তী নবীগঞ্জ, হাজীগঞ্জ ও নাসিরগঞ্জ এলাকায় খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটের ফেরি-লঞ্চসহ ছোট নৌযানগুলো। কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটিতে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে, মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায়ও নেই অনেকেই।
স্থানীয়রা জানায়, কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট এলাকার তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ হুমকিতে রয়েছে। মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। তবে নদীতে ভাটা পড়লে পানি কিছুটা নামলেও আবার জোয়ার আসলে একই অবস্থা তৈরি হয়। কমলনগর উপজেলার কালকিনি, সাহেবেরহাট, পাটওয়ারীরহাট, চরফলকন, চরমার্টিন, চরলরেঞ্চ ইউনিয়ন এবং রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার, বড়খেরী, চরগাজী, চর আবদুল্লাহ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০টি এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, নিচু ঘরের ভিটি তলিয়ে গেছে। কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন এলাকায় রাস্তা ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।
রামগতি উপজেলার বড়খেরী এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন, রাহেলা বেগমসহ কয়েকজন জানান, টানা বৃষ্টি ও মেঘনার জোয়ারের পানি প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ এবং ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন তারা। দুই শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
লক্ষ্মীপুরে ২০ গ্রাম প্লাবিত মৌলভীবাজারে বন্যার শঙ্কা
কমলনগর উপজেলার কালকিনি এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম, নাসিরসহ কয়েকজন জানায়, মেঘনার পানিতে তারা গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। হাঁস-মুরগি এবং গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। গৃহস্থালির রান্নার কাজেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার মজুত রয়েছে। পাশাপাশি ২৮৫টি আশ্রয়ণ কেন্দ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৬৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া মৌলভীবাজারে টানা বৃষ্টি এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজার জেলার চারটি নদ-নদীতে বেড়েছে পানি। জেলার জুড়ী নদীতে বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া মনু, ধলাই এবং কুশিয়ারা নদ-নদীতে পানি বেড়েছে। অব্যাহত বৃষ্টি থাকলে বন্যার শঙ্কা রয়েছে। গত শুক্রবার ভোর থেকে গতকাল শনিবার দিনব্যাপী জেলা সদরসহ সাত উপজেলায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুদিন টানা বর্ষণ ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার মনু নদ, ধলই নদী ও জুড়ী নদীসহ কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, শনিবার বিকাল ৩টায় মনু নদের রেলওয়ে ব্রিজে পানি ২০২ সেন্টিমিটার, মনু নদের চাঁদনীঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার, ধলাই নদী রেলওয়ে ব্রিজে পানি ২৫০ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে ১২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জুড়ী নদীর পানি ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা যায়, গত বছর বর্ষা মৌসুমে টানা ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলায় মনু ও ধলাই নদ-নদীর পৃথক পৃথক স্থানে একাধিক ভাঙন দেখা দেয়। এই ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশের কারণে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও ফিশারি। গৃহহীন হয়ে আশ্রয়কেন্দ ও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হয় বন্যাকবলিতদের। গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়তে হয় তাদের।
এছাড়া গত বছর মনু ও ধলাই নদ-নদীর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করার আগেই চলতি মৌসুমে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে নদীতীরবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ পড়েছে দুশ্চিন্তায়।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন, জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা, মনু ও ধলাই নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, বৃষ্টি থেমে গেলে পানি কমে যাবে।