লক্ষ্মীপুরে ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ

জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২৮ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ করা হয়েছে। অতিবৃষ্টি, জলাবদ্ধতা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমে জেলায় আউশ ধানের ভালো ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদনও আশানুরূপ হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

জেলার কৃষকরা এবার উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের পূর্বাচী, ব্রিধান-৪৮, ব্রিধান-২৭, ব্রিধান-৫৫, বিআর-২৬, ব্রিধান-৪৩, বিআর-২ ও স্থানীয় কালাসাইট্টা, বৈলামসহ একাধিক জাতের আউশ আবাদ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে উফশী জাতের পূর্বাচী এবং স্থানীয় কালাসাইট্টা জাত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার পাঁচ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২৮ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় উফশী জাতের তিন হাজার ৫৩০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের ৬০০ হেক্টরসহ মোট চার হাজার ১৩০ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় উফশী জাতের চার হাজার ১০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের ৭০ হেক্টরসহ মোট চার হাজার ৮০ হেক্টর, রামগঞ্জ উপজেলায় উফশী জাতের ৫৫০ হেক্টর, রামগতি উপজেলায় উফশী জাতের সাত হাজার ১০০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের এক হাজার ৩০০ হেক্টরসহ মোট আট হাজার ৪০০ হেক্টর, কমলনগর উপজেলায় উফশী জাতের আট হাজার ৫০০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের দুই হাজার ৫০০ হেক্টরসহ মোট ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে আউশ ধান, যা গতবারের তুলনায় ৩৩০ হেক্টর বেশি। গত বছর ৫৯ হাজার ৪৬৫ মেট্রিক টন আউশ উৎপাদন হলেও এবার তা এক লাখ টনের কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আশাবাদী।

কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন এলাকার কৃষক জেবল হক জানান, চলতি মৌসুমে তিনি দুই একর জমিতে পূর্বাচী উফশী জাতের আউশ ধান চাষ করেছেন। এছাড়া সরকারি প্রণোদনা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা পরামর্শ দেওয়ায় ক্ষেতে ভালো ফলন হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল গ্রামের কৃষক মজনু মিয়া জানান, বোরো ধানে লোকসান হলেও তিনি বর্গা নিয়ে পাঁচ একর জমিতে আউশ ধান চাষ করেছেন। তিনি স্থানীয় কালাসাইট্টা চাষ করে বেশ ভালো ফলন হওয়ায় বোরো ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করেন।

একইভাবে সদর উপজেলার চররমনী মোহন গ্রামের কৃষক রেজ্জাক হোসেন জানান, আমন ধানে জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতি হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেতের চাষকৃত আউশ ধানের ভালো ফলন হওয়ায় তিনি বেজায় খুশি। ধানে কিছুটা পাক ধরেছে, দু-এক সপ্তাহের মধ্যে ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, বিগত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলায় আউশ ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা দিন দিন আউশ উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন। এছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ, সার, সেচ ও অর্থ সহায়তা প্রদান করায় জেলায় আউশের আবাদ বেড়েছে।