শেয়ার বিজ ডেস্ক: নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে মানুষ পোড়ানোর হুকুম দেয়ার জন্য বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে এনে শাস্তির মুখোমুখি করার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে ওই লন্ডনে বসে হুকুম দেবে আর আমার দেশের মানুষকে ক্ষতি করবে, দেশের মানুষকে মারবে, তা হবে না। দরকার হলে ওটাকে ওখান থেকে ধরে এনে শাস্তি দেয়া হবে। ধরে এনে শাস্তি।’
গতকাল শনিবার সকালে গোপালগঞ্জে টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ মাঠে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে ঠিক একইভাবে করছে তারেক জিয়া। অ্যাম্বুলেন্সে রোগী যায়, তার ওপর হামলা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, পুলিশের ওপর হামলা, পিটিয়ে পুলিশকে হত্যা করা। বাংলাদেশে এ সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন চলবে না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে লন্ডনে বসে হুকুম দিয়ে মানুষ হত্যা করে, রেলগাড়ি পোড়ায়, বাস পোড়ায়, গাড়ি পোড়ায়, আমাকে ২১ আগস্ট হামলা দিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করেছে, আর তার পুত্র লন্ডন থেকে হুকুম দিয়ে এখানে মানুষ পোড়ায়। ওই তারেকের মতো একটা খুনি তার কথা শুনে এখানে যে বিএনপি নেতারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছেন। মানুষ হত্যা করলে তার দায়িত্ব যে পোড়াচ্ছে তাকেই নিতে হবে। ’
বিএনপি নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘ওই ধরনের একটা লম্পটের কথা শুনে বিএনপি নেতারা বা কর্মীরা কেন আগুন দেয়, অগ্নিসন্ত্রাস করে আর মানুষ পোড়ায়, তাদের কাছে সেটাই আমার প্রশ্ন। তাদের কী লাভ? শাস্তি তো তারাই পাবে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘এসবের হিসাব তো পার্থিব জগতে হবে, আবার আল্লাহর কাছেও হবে মানুষ হত্যা করার জন্য হবে। কাজেই শাস্তি তো তাদের পেতে হবে। ও তো হুকুম দিয়েই খালাস।’
নিজের নির্বাচনী আসনের এই জনসভায় তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশ শান্তিতে থাকুক, দেশের মানুষ নিরাপদে থাকুক। দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হোক। আর তারা বারবার বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। বারবার প্রতিবন্ধকতার চেষ্টা করে। কিন্তু এটা করেও তারা সফল হতে পারছে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘নির্বাচন বানচাল করার অনেক ষড়যন্ত্র চলছে এবং এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে
আন্তর্জাতিকও অনেকে জড়িত। আমাদের দেশের নির্বাচন হবে না, এখানে তারা তৃতীয় পক্ষ আনবে। তৃতীয় পক্ষ কি করতে পারে? দেশের কোনো উন্নতি করতে পারে না।’
সেই চক্রান্তের ‘সমুচিত জবাব দেয়া হবে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তার জবাব আমরা দেব। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন হলো মানুষ পোড়ানো। মানুষের ক্ষতি করা। দেশের সম্পদ নষ্ট করা। এদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। দায়িত্বরোধও নেই। এদের মধ্যে মনুষ্যত্ব নেই। মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না। ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করে অর্থ পাচার করে বিদেশে পালিয়েছে। আর সেখান থেকে মানুষ খুন করার হুকুম দিচ্ছে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ যখন কাজ করে, তখন বারবার বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু তারা সফল হতে পারবে না। কারণ জনসমর্থন তাদের নেই। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মর্যাদা পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করবে ২০২৬ সালে। আর এই যাত্রা সফল করতে পারে একমাত্র আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ পারবে না। কারণ সেই যোগ্যতাই নেই বিএনপি-জামায়াতের। বিএনপি খুনিদের পার্টি আর জামায়াত যুদ্ধাপরাধী পার্টি।’”
বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে সরকারের প্রচেষ্টা চলমান আছে বলেও জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা।
এ সময় দেশের মানুষের প্রতি তার নিবেদিতপ্রাণ কাজ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বারবার হত্যা করার জন্য আঘাত এসেছে। কিন্তু আমি ঘাবড়ে যাইনি। কারণ আমার জীবনটা উৎসর্গ করেছি এদেশের মানুষের জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে চলতে হয়েছে, তারপরও আপনারা আমাকে আগলে রেখেছেন। সে জন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন ছিল আমার বাবার, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছি, আমি নিজের দিকে তাকাইনি।’
বোন শেখ রেহানার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেহানা আমার ছেলে-মেয়ে দুটিকে মানুষের মতো করে মানুষ করেছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়েরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখের সঞ্চালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর চাচা বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, শেখ সারহান নাসের তন্ময়, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবুদ্দিন আজম। এ জনসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অভিনেত্রী তারিন ও মীর সাব্বির।