নিজস্ব প্রতিবেদক : বিনিয়োগকারীদের অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হচ্ছে। তালিকাভুক্ত ১৮টি ব্যাংক এখনও লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি নিয়ন্ত্রণ ও অনুমোদন পায়নি তারা। ফলে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হলেও নির্ধারিত সময়ে লভ্যাংশ ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।
ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল অন্তত ১৮টি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সভা করেও লভ্যাংশ ঘোষণা স্থগিত রাখে। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন না থাকায় সিদ্ধান্ত জানানো সম্ভব হয়নি। এদের মধ্যে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এক ধাপ আগেই ২৯ এপ্রিল সভা স্থগিত করেছিল। ইউনিয়ন ব্যাংক এখনও বোর্ড সভার দিনক্ষণই জানায়নি।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়ম অনুযায়ী, কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ১২০ দিনের মধ্যে জমা দিতে হয়। দেরি হলে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে জরিমানার মুখে পড়তে হয়। তাই ব্যাংকগুলো সময়মতো সভা করলেও লভ্যাংশ ঘোষণা না করে অপেক্ষার পথ বেছে নিচ্ছে।
এই ১৮ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে-এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ, ঢাকা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি, আইএফআইসি, ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, এনআরবি, এনআরবিসি, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার, রূপালী, এসবিএসি, সোশ্যাল ইসলামী, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ইউসিবি।
এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। তবে অনুমান করা হয়েছিল যে সময়মতো অনুমোদন পাওয়া যাবে। বাস্তবে তা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে লভ্যাংশ বিতরণে কঠোর শর্ত আরোপ করেছে। খেলাপি ঋণ, ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের প্রভিশন ঘাটতি কিংবা আগের বছর সঞ্চিত মুনাফা ব্যবহার করেও লভ্যাংশ দেয়া যাবে না, এই নিয়মে অনেক ব্যাংক বাধার মুখে পড়েছে। এমনকি কিছু ব্যাংককে বড় অঙ্কের প্রভিশনিং করতে গিয়ে বিপুল লোকসান মেনে নিতে হয়েছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে যে শুধু চলতি বছরের মুনাফা থেকেই লভ্যাংশ দেয়া যাবে, আগের বছরের সঞ্চিত লাভ ব্যবহার করা যাবে না। ফলে এই কঠোর শর্তের কারণে অনেক ব্যাংকের পক্ষে লভ্যাংশ ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না।
বর্তমানে লভ্যাংশ-সংক্রান্ত বেশ কিছু আবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, যেখানে কিছু শর্ত শিথিল করার অনুরোধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এক চেয়ারম্যান জানান, বিনিয়োগকারীদের আস্থা রক্ষায় অন্তত কিছুটা হলেও লভ্যাংশ দেয়ার ইচ্ছা ব্যাংকগুলোর রয়েছে।
নতুন সরকারের আমলে আল-আরাফাহ, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি, আইএফআইসি, ইসলামী, প্রিমিয়ার, সোশ্যাল ইসলামী, ইউসিবি, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের পর্ষদে রদবদল আনা হয়েছে। মূলত ঋণ জালিয়াতি ও শাসন ব্যবস্থায় ব্যর্থতার কারণে এসব পরিবর্তন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ১৪টি ব্যাংক ইতোমধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। সর্বোচ্চ ১৭.৫ শতাংশ নগদ ও ১৭.৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে ইস্টার্ন ও উত্তরা ব্যাংক। বাকিদের মধ্যে রয়েছেÑব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, সিটি, ডাচ্-বাংলা, যমুনা, মিডল্যান্ড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনসিসি, প্রাইম, পূবালী, শাহজালাল ইসলামী ও ট্রাস্ট ব্যাংক। তবে আইসিবি ইসলামিক ও ন্যাশনাল ব্যাংক লোকসানে থাকায় লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
বর্তমানে ব্যাংক খাতের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট মূলধনের প্রায় ১৮.৮ শতাংশ। এই খাতের গড় পিই রেশিও মাত্র ৬ শতাংশ। বর্তমানে ১৬টি ব্যাংকের শেয়ারদর ১০ টাকার নিচে অবস্থান করছে। সর্বোচ্চ দামে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক (৪৯.৬ টাকা) এবং সর্বনিম্নে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (২.৯ টাকা)।