নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথমে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম নিজ এলাকার কয়েকজনের কাছ থেকে লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে ঢাকায় আত্মগোপন করে ব্যবসা শুরু করে হাসান ছালাম (৪১)। বসুন্ধরা সিটিতে জেমস সুপারশপ নামে একটি পাথরের দোকান দেয়। পরে সেটা দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে একই উপায়ে আরও কয়েক কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসা বড় করে। কিন্তু ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের টাকার লভ্যাংশ ও মূলধন ফেরত না দিয়ে প্রতারণার আশ্রায় নেয়। পরে একটি সরকারি ব্যাংক থেকে দেড় কোটি টাকা আর গিয়াস উদ্দিন নামে আরেক ব্যক্তির অর্ধকোটি টাকার প্রতারণা মামলায় সাজা হলে পলাতক জীবন শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় ছিলেন র্যাব-৩-এর উপ-অধিনায়ক মেজর রাহাত হারুন খান ও স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক।
এর আগে গত সোমবার মতিঝিল এলাকা থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওই পলাতক আসামি হাসান ছালামকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩।
সিও বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ না করা এবং বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করে তা পরিশোধ না করায় অর্থঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতি মামলায় ২০২০ সালে হাসানের বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এতে সে রাজধানীর ডেমরা, উত্তরা, কেরানীগঞ্জ ও মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন সময় গাঢাকা দিয়ে থাকে। তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতিসহ স্ত্রীর করা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, আসামি হাসান ঢাকা ও কুমিল্লায় জেমস সুপার শপ লিমিটেড, জেমস অ্যান্ড জুয়েলার্স, মতিঝিলে মা টেলিকম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উজির আলী ট্রাভেলস, কুমিল্লা কান্দিরপাড়ে ডায়মন্ড গ্যালারি লিমিটেডসহ যৌথ মালিকানায় মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করত। দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফার আশায় একই সময় একাধিক প্রতিষ্ঠানে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে থাকে। এতে ভালো মুনাফা হওয়ায় আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়িক পার্টনারসহ আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে উচ্চহারে মাসিক লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলে প্রায় ছয় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়। কিছুদিন লভ্যাংশ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়। পাওনাদাররা টাকার জন্য নিয়মিত তাগিদ দিতে থাকলে টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে চেক দিলেও তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা পাওয়া যায় না এবং ব্যাংক চেক ডিজঅনার করে দেয়। পাওনাদাররা টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখাতো। এতে তারা আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করে।
ব্যাক্তির কাছ থেকে টাকা নেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও টাকা নেয়ার কথা জানান লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ইবিএল, প্রাইম ব্যাংক ও প্রিমিয়াম ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ঋণ নেয়। প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়। নিদির্ষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ না করায় এসব প্রতিষ্ঠান তাকে বারবার চূড়ান্ত নোটিশ দেয়। পরে আদালতে আর্থিক ঋণ খেলাপের দায়ে মামলা করে প্রতিষ্ঠানগুলো। মামলাগুলোর শুনানিতে হাজিরাও দেয়নি সে। কৌশলে এসব ঋণের দায় এড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে জমি কেনে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে পান্থপথে তার আলিশান ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় বন্ধুর বাসায় গাঢাকা দেয় হাসান। এ সময় সে দেশ ছেড়ে ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, জেমস সুপারশপে (বসুন্ধরা সিটি) পার্টনারশিপে মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গিয়াস উদ্দিন নামক এক ব্যাক্তির কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে হাসান। পরে গিয়াস উদ্দিন প্রতি মাসে লাভের টাকা চাইলে টালবাহানা শুরু করে। এতে গিয়াস মূলধন ফেরত চায়। হাসান মূলধন ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে হাসানের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন গিয়াস উদ্দিন।