লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ হোক

সহজে ও নিজের সুবিধাজনক সময়ে কোনো স্থানে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত বাহন মোটরসাইকেল। সে কারণে বাহনটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে ব্যাপকহারে। প্রতি বছর দেশে কয়েক লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে বলে সরকারি নানা পরিসংখ্যানে জানা যাচ্ছে। কিন্তু মোটরসাইকেলের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটির মাধ্যমে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে সমানতালে। বিশেষ করে অপ্রাপ্ত বয়স্করা বেশি হারে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে অপ্রাপ্ত বয়স্করা যাতে মোটরসাইকেল চালাতে না পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া একান্ত আবশ্যক। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। তাহলে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোটরসাইকেল চালানো নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে ধারণা করা যায়। কেননা, প্রাপ্ত বয়স্ক ছাড়া কারও লাইসেন্স পাওয়ার সুযোগ নেই।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘১০ দিনে বাইক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৭, বেশিরভাগই অপ্রাপ্তবয়স্ক’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে মোট ১০ দিনে দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৯৭ জন। তাদের মধ্যে ৫১ জনই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। অর্থাৎ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৫৭ শতাংশের বয়স ছিল ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

প্রতি বছরই দেশে প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়। বিশেষ করে সড়ক পথ ও নৌপথে দুর্ঘটনার কথা বেশি শোনা যায়। এর আগে বহুবার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নদী পার হওয়ার সময় মাঝ নদীতে লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। সেসব দুর্ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির খবরও পাওয়া যায়। এর বাইরে বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার কথাও জানা যায়। তবে এবার সড়ক পথ ও নৌপথে খুব বড় ধরনের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া না গেলেও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার খবর এসেছে অনেক। দেশে এখন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান বাহন হয়ে উঠছে মোটরসাইকেল। কাজেই মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়ে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে বৈকি। তাছাড়া এখন দেশে সর্বত্রই মোড়ে মোড়ে ভাড়াই চালিত মোটরসাইকেলের দেখা মেলে। এসব ভাড়ার মোটরসাইকেলও দুর্ঘটনা বৃদ্ধির জন্য অনেকটা দায়ী। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, বর্তমান সময়ে উঠতি বয়সের ছেলেরা অতি মাত্রায় মোটরসাইকেল চালানোর প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নাটক, সিনেমার মাধ্যমে উৎসাহিত হয়ে তারা অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার জন্য। অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকরা তাদের সে অন্যায় আবদার মেটাতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এভাবেই অনেকে সন্তানদের অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোটরসাইকেল চালানো নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি ভেবে দেখবে বলেই বিশ্বাস।